পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

নতুনমামী, সরোজা দিদি, মোহিনীবাবু, এটর্নি কবি অক্ষয় চৌধুরী ও তাঁর শ্রী-মায়ের সঙ্গে পাতান নাম যাঁর “বিহঙ্গিনী”-এদের মনে পড়ে। বোলপুরের ছোট ছোট স্রোতস্বতীর ধারে মাঝে মাঝে এক একটি সুন্দর নুড়ি পাওয়া যেত! আমাদের কে একজন বিজ্ঞ লোকে বলেছিলেন এক- দিন-“এই যে সব নুড়ি দেখছ, এরা এককালে কোন ফল-ফুল ছিল, এখন জলের তলায় পড়ে থেকে জমে জমে পাথর হয়ে গেছে। এদের বলে ফসিল।” তাই শুনে জায়গাটা চিহ্নিত করে আমরা এক একটা আমলকী পতে পুতে রাখতে লাগলুম। একদিন অন্তর বালি খুড়ে খুড়ে দেখি সেটা কতদূর প্রস্তরায়িত হয়েছে। কে একজন বললেন-“আরে মুর্খরা অমন করে থেকে থেকে বালির থেকে বের করলে ও কি কখন পাথর হবে? চুপ করে পড়ে থাকতে দাও এখন। পঞ্চাশ বছর পরে এলে দেখবে আমলকী আর নেই, একটা নুড়ি পড়ে আছে ঐ জায়গাতে।” আমরা সেই পঞ্চাশ বছরের পরে ফিরে এসে নুড়ি দেখার আশায় আপাত চেষ্টা ছেড়ে দিলুম। পঞ্চাশ বছর যথাসময়েই অতিক্রান্ত হল, সে নুড়ির খোঁজে বেরুতে কিন্তু আর মনেও রইল না, বেরোইওনি কেউ। সে খোয়াইয়ের স্তুূপ, সে বালির বাঁধ, সে জলের ধারা কোথা দিয়ে কোথায় সরে গেছে কেউ নির্ধারিত করেনি। সারা সকালটা বেড়িয়ে ঘুরে ফিরে খাবার ঘুরে লম্বা টেবিলের ধারে বসে সকলে মিলে স্তুপীকৃত লুচি তরকারী ও বোলপুরের প্রসিন্ধ পাতক্ষীরের প্রতি সদাচরণ করে খানিকক্ষণ ধরে বিশ্রাম করতুম সবাই।

 এই প্রসঙ্গে একটা কথা মনে পড়ে-আমার পিতৃদেবের অশুচ জাতিদের বিনা আড়ম্বরে শুচি করে নেওয়া, তাদের হাতে খাওয়া-দাওয়া ও সব রকম ভৃত্যগিরিতে তাদের নিযুক্ত করা। প্রায় বিশ বছর পরে পঞ্জাবের আর্যসমাজের সংস্পর্শে এসে অছুত উদ্ধার মহাঘটার সঙ্গে সম্পন্ন হতে দেখেছি—কিন্তু বোলপুরে বাবামহাশয় বিনা বাক্যব্যয়ে ডোম বরকন্দাজ স্বরুপ সর্দারের পুত্রকে নিজের খানসামা নিযুক্ত করে, ট্রেনিং দিয়ে দিব্যি উপযুক্ত চাকর তৈরি করে নিলেন। সে-ই টেবিলে আমাদের সবাইকে খাওয়াত, দরকার হলে লুচি ভাজা, মাংস রোস্ট প্রভৃতিও সে-ই করত। এতে উপস্থিত দলের কারো কোন আপত্তি হল না।

 শান্তিনিকেতনে এই সময় আমায় সব প্রথম লেখা পেয়ে বসল। ‘সখা’ আমাদের সত্যিকার সখা ছিল তখন। দুপুর বেলা ঘরের ভিতর বিশ্রাম করতে করতে তার সব রচনা পড়ে পড়ে আমায় রচনা চাপল। দুতিন

৯৩
৯৩