পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দিন ধরে অন্যদের লুকিয়ে দু-একটা ছোট গল্প লিখলুম। সরোজা দিদি একদিন ধরে ফেললেন। আমার খাতা কেড়ে নিয়ে সকলকে দেখিয়ে দেখিয়ে ঠাট্টা করে করে বলতে লাগলেন-“লেখিকা হবেন সরলা! গল্প লেখা হয়েছে! কাগজে বেরুবে নাকি?”

 বড়দের ঠাট্টা-বিদ্রুপ ছোটদের মর্মবিদারক হয়, তাঁর ঠাট্টায় আমার লেখবার প্রবৃত্তি বন্ধ হয়ে গেল। তার অনেক পরে মায়ের উৎসাহে ‘সখা'তে কবিতা প্রতিযোগিতায় কবিতা পাঠালুম। লেখার স্রোতটা কিন্তু ধারাবাহিকভাবে তখন থেকে চলল যে তা নয়। তখন আমি বেশী নিযুক্ত থাকতুম পড়তে। স্কুলের পড়া বলছিনে বাঙলা সাহিত্য, বিশেষ করে পুরনো ভারতী। একেবারে মগ্ন হয়ে থাকতুম তার ভিতর। ঈলিয়াডের অনুকল্পে ‘রামিয়াড়’ প্রভৃতি নতুন মামার কৌতুক রচনা হাসিগত উচ্চ সাহিত্য-রসে আমায় একেবারে ভরপূর রাখত। তখন ভারতীতে প্রতি মাসে হাস্যপ্রধান ‘নক্সা’ বেরত। আমি একবার বিনা নামে একটা নক্সা লিখলুম। মা ভারতীতে বের করলেন। চলে গেল বড়দেরই কারো লেখা বলে। সেই পর্যন্ত নিজের উপর একটা ভরসা এল-লিখতে পারি। বহ, বর্ষ পরে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের হাসির গান যখন আমার কর্ণকুহরে এল- সেগুলো আর মজলিসী আমোদ-প্রমোদের কোটরে পড়ে থাকতে পেল। মহীশূর প্রবাসের অব্যবহিত পর্বে সেগুলি সংগ্রহ করে নিয়ে গিয়ে সেখান থেকে ভারতীতে একটি প্রবন্ধ পাঠালম-‘বাঙলায় হাসির গান ও তার কবি। সাহিত্যের সমুচ্চস্তরে তাদের আসন পাতা হয়ে গেল। দ্বিজ রায় শেষ পর্যন্ত আমার সে বন্ধুকৃত্যটি ভোলেন নি।

 ‘সখা’য় কবিতার পর ‘বালক'-এ আমার দু-একটা রচনা বেরয়। গিরীন্দ্রমোহিনীর সঙ্গে মার তখন ভাব হয়েছে ও ‘মিলন’ পাতাল হয়েছে। তাঁর দেবর অক্রূর দত্ত পরিবারের গোবিন্দ দত্ত রবিমামার বন্ধ ও সাহিত্য-রসিক। 'বালকে' প্রকাশিত আমার একটি লেখার তিনি খুব রসগ্রাহী হলেন ও রবিমামাকে সে বিষয়ে লিখে একটি ভবিষ্যদ্বাণী করলেন-“একদিন এই নবীন লেখনী বঙ্গ সাহিত্যে প্রবীণতায় নিজের স্থান নেবে।” রবিমামাই তাঁর চিঠি আমায় পড়ে শোনালেন একটু, হাসতে হাসতে। সে হাসি ঐ ভবিষ্যদ্বাণীর অনুমোদনে বা সন্দিহানে জানিনে। তখন আমার বয়স বার বছর।

 ইতিমধ্যে আমার এণ্ট্রান্সের টেস্ট পরীক্ষার দিন কাছাকাছি এল। মা শুনে না ভেবে চিন্তেই একটা মন্তব্য করে ফেললেন—“নিশ্চয়ই ফাস্ট

৯৪