পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হবি?” আমার শুনে হাসি পেল। এমন অদ্ভুত কথা মা কি করে বললেন? হেমপ্রভা থাকতে আমি ফাস্ট হব! কিন্তু আশ্চর্য এই যে মাতৃত্বচনই সত্য হল। শুধ, টেস্টে যে ক্লাসে প্রথম হলুম তা নয়, সেবার এণ্ট্রান্স পরীক্ষায় আমিই পাস হলুম এবং স্কলার্শিপও পেলুম—আর হেমপ্রভা বেচারী কোন্ একটা বিষয়ে কম নম্বর পাওয়ার সবসদ্ধ একবারে ফেল হয়ে গেল। এই আঘাতে তার brain fever হল। দুবছর ধরে তার পড়া বন্ধ রইল।

 এবারকার এণ্ট্রান্স পরীক্ষায় ইতিহাসের কাগজ পড়েছিল এন ঘোষ, ব্যারিস্টারের হাতে। তিনি সেকালের ইংলিশ পাঠ্যপুস্তকের একজন ‘নোট' লেখক ও ‘ইণ্ডিয়ান নেশন’ সাপ্তাহিক কাগজের সম্পাদক। সেবার ইতিহাসের প্রশ্নাবলীর মধ্যে মেকলের ‘লর্ড ক্লাইভ' নামক পাঠ্যপুস্তকের উপর ভিত্তি করে ক্লাইভের বঙ্গবিজয় সম্বন্ধে একটি প্রশ্ন ছিল। তাতে খুব বেশী নম্বর নির্ধারিত ছিল। আমি মেকলের প্রতিপাদ্য বাঙালী চরিত্রের হয়তার প্রতিবাদ করে পাঠ্যপুস্তকের লিখিত মন্তব্যের বিপরীত নিজের মন্তব্যপূর্ণ উত্তর দিয়েছিলুম। পরম্পরায় কানে এল মিস্টর এন ঘোষ তার দরুন আমার নম্বর না কেটে আমায় খুব ভাল নম্বরই দিয়েছিলেন, আর খোঁজ করেছিলেন এ মেয়েটি কে? কাদের বাড়ির? ইতিহাসের কাগজে নাকি আমি সেবার প্রথম হয়েছিলুম। তখন আমার বয়স তের বছর। বাঙালী জাতি সম্বন্ধে আমার আত্মাভিমান তখনই মাথা খাড়া করেছিল। এরই পূর্ণ বিকাশ দেখা দিলে বছর দশ-বার পরে কিপলিং-এর একখানা ছোট গল্পের বইয়ের একটা গল্পে বাঙালী জাতিকে ভীষণভাবে অবমানিত পেয়ে তার প্রতিবিধানকল্পে আমি যে দেশ ও জাতিব্যাপী প্রচেষ্টা আরম্ভ করলুম তাতে। সে বিষয়ে বিস্তারিত কথা যথাসময়ে আসবে। ইতিমধ্যে আমার বাঙালী জাত্যভিমানের মধ্য-বিকাশ হল প্রতাপাদিত্য প্রভৃতি বঙ্গবীরদের স্মৃতি উদ্বোধক উৎসবের প্রবর্তনায়।

 আমি যখন এণ্ট্রান্স পাস করলুম ফণিদাদা তখন রাজসাহী কলেজে প্রোফেসর। মাকে দিদি সেখানে নিজের কাছে কয়েক মাসের জন্যে নিয়ে যাবার আয়োজন করলেন। সেবার এলাহাবাদে বোধ হয় প্রথম কংগ্রেসের অনুষ্ঠান চলছে। বাবামশায় সেখানে। আমি তাদের স্টেশনে পৌঁছে দিতে গেলাম। গাড়ি যখন ছাড়ে ছাড়ে আমার হঠাৎ কান্না পেল, আমি খুব কাঁদতে লাগলুম। মায়ের দয়া হল। তখনো সময় আছে, তাড়াতাড়ি

৯৫