পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ওরিজিন্যাল গবেষণা তখন আমার মাথায় আসা সম্ভব নয়। সে সময় জর্জ ইলিয়ট প্রভৃতির বই খুব পড়তুম। যা হোক লোকে জানালে প্রতি- যোগিতায় আমার জিৎ হয়েছে এবং নির্ধারিত প্রাইজটি আমায় দিলে। দিদি রেগে গেলেন, বললেন লোকেন পক্ষপাতিতা করেছে, আগে থাকতে ঠিক করা ছিল ওর যে আমাকেই প্রাইজ দেবে-তার প্রমাণ এই যে, জিনিসটার উপর আগে থাকতেই আমার নাম লিখে রেখেছিল। জিনিসটা হচ্ছে প্রায় একশখানা ছবি সমেত একটা spectroscope, যার দুভাগে দুখানা একই রকম ছবি রাখলে focus হয়ে একখানা অতি সুস্পষ্ট বড় ছবি দেখা যায়।

 লোকেনের কৈফিয়ৎ তলব হল। সে বললে, তার জানা ছিল আমি বেশী ভাল করে লিখতে পারব। দিদির রাগ তাতে কমল না, আমি কিন্তু ওঁদের দুজনের ঝগড়া শুনে হেসে কুটিকুটি হলম। চিরকালই আমার এই স্বভাব—আমায় বা আমার সম্পর্কে কেউ রেগে কিছু বললে আমি হাসি।

 বিকেলে আমরা সবাই হেঁটে বেড়াতে বেরতুম। রাজশাহীর একটা দিকে তখন খুব জঙ্গল ছিল। একদিন জঙ্গলে বেড়াতে যাওয়া স্থির হল। অনেকে ভয় দেখালে-ও জঙ্গলে এখনও বাঘ থ্যকে। সাবধান করলে-সবাই একসঙ্গে কাছাকাছি থাকি যেন, আগে-পিছে না হই, জোরে জোরে শব্দ করে কথা কইতে কইতে আর হাততালি দিতে দিতে যাই যেন, আর সন্ধ্যা হবার আগেই যেন ফিরে আসি। শহুরে মেয়ে আমরা, বাঘ বেরনর ব্যাপারটা একটা কাল্পনিক কথা মাত্র, তার সত্যতায় বিশ্বাস নেই। সুতরাং তার ভয়াবহতাও আমার মনে এল না। বরঞ্চ হাততালি দিয়ে চলতে হবে শনে ভারি মজা লাগল। চিড়িয়াখানায় পিঁজরের ভিতর দেখা বন্ধ বাঘ যে জলজ্যান্ত খোলা বাঘ হয়ে আমাদের সামনে আসতে পারে, এমন অভূতপূর্ব অবস্থা হাস্যকরই ঠেকল। আমি একটা বোকা-ন্যাকার মত বললুম—“বাঘ বেরলে যদি তাকে দেখে আমার হাসি পায়।” “ওঁর সবতাতেই হাসি পায়!” দিদি বল্লেন—“আহামরি-শিশু!” লোকেন বললে—“হ্যাঁ তাই বটে! বাঘ বেরলে হাসি পাবে না আরও কিছু।”

 চিত্ত তখন একেবারে লঘু, ভয়-ভাবনার ধার ধারিনে, সবই মজার বিষয়, হাসির বিষয়! ভয়ের ভয়ঙ্করতা জানা না থাকার দরুনই নির্ভীক হয় মানুষ। কিন্তু যখন জানলুম, তখনও ভয়কে দুঃখকে চোখরাঙানিকে

৯৭