পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

চিঠি পেয়েছিলুম—অন্তত খান পঞ্চাশেক হবে—সবই অকালে কালগভে প্রলীন হয়ে গেছে।

 তার পরে বেরল ‘মালতী-মাধব’। এ সবই আমার এফ-এ ও বি-এতে পাঠ্যপুস্তক ছিল। ‘মৃচ্ছকটিক’ আরম্ভ করেছিলুম, শেষ হয়নি। ‘কবি মন্দির’ নাম দিয়ে এগুলি একত্রে গ্রন্থাকারে বের করতেও প্রবৃত্ত হয়েছিলুম—দীনেশ সেনের তত্ত্বাবধানে, কেননা তখন নিজে আমি লাহোর যাত্রাভিমুখে। দু-তিন ফর্মা মাত্র ছাপিয়ে দিয়ে দীনেশবাবু আর শ্রমস্বীকার করে অগ্রসর হলেন না—ছাপান ফর্মাগুলি কোথায় রাখলেন, তারও সন্ধান পেলুম না—ছাপান ফর্মাগুলি কোথায় রাখলে, তারও সন্ধান পেলুম না—ছাপাখানা তাদের পাওনা আমার কাছ থেকে কড়ায় গণ্ডায় অগ্রিম নিয়ে নিয়েছিল। নিজে প্রবাসে থেকে কারো হাতে বই ছাপানর ভার দেওয়া নিরর্থক অর্থের শ্রাদ্ধমাত্র বুঝে নিলুম। তারপর দেশে এসে যখনই নিজে চেষ্টাপরায়ণ হয়েছি, জগৎজোড়া যুদ্ধের করালমূর্তি দেখা দিয়েছে—কাগজের দুষ্প্রাপ্যতাবশত সকলে আমায় নিরস্ত করেছে।

 ইতিমধ্যে মায়ের সঙ্গে সোলাপুরে মেজমামার কাছে থাকতে গেলুম কয়েক মাসের জন্যে। সেখানে মারাঠি ক্লাবে দুর্গাপূজার ‘দশেরা’ বা বিজয়া দশমীর উৎসবের দিন বরোদার গাইকোয়ার এলেন। মহারাজা অতি ভদ্র—মায়ের প্রতি ও আমার প্রতি যে সৌজন্য দেখালেন, তাতে মুগ্ধ হলুম। কিন্তু সেদিন যে উৎসব দেখলুম, তাতে একেবারে চমৎকৃত হলুম। খালি লাঠি-তলোয়ার খেলার ও নানাবিধ ব্যায়ামের প্রদর্শনী —আর বীরত্বমূলক বক্তৃতার ধারা। আমাদের দেশের বাঈনাচ, গান ও মদ্যপান প্রভৃতির ধারা নয়।

 তার পরে গেলুম, পুণায় বম্বে প্রসিডেন্সীর সিভিলিয়ানদের একটা Fancy-dress Ball-এ। সমস্ত ঘর-ভরা সাহেব-মেমদের মধ্যে আমরা তিনজন মাত্র ইণ্ডিয়ান—মেজমামা, মা ও আমি। মনে পড়ে মা সন্ন্যাসিনীর সাজে গিয়েছিলেন, আমি সরস্বতীর। মাকে এই সন্ন্যাসিনীর বেশ খুব শোভা পেত। বসন্ত-উৎসবের অভিনয়েও তিনি সন্ন্যাসিনীর ভূমিকা নিয়েছিলেন। নতুনমামী হয়েছিলেন উপেক্ষিতা নায়িকা—যতদূর মনে পড়ে সন্ন্যাসিনীর বরে তিনি নায়কের প্রেমে পুনঃপ্রতিষ্ঠিতা হয়েছিলেন।

 পুণায় যাওয়া সেবার এই ‘সিভিল-সার্ভিস নাচ’ উপলক্ষে। কিন্তু সে ব্যাপারটা আমার মনে কোন স্থায়ী রেখা কাটল না—পদ্মপত্রে জলের মত সরে গেল। লোকেনের সেই কথাটি মনে পড়ল—যেদিন সে অনুভব