পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

করেছিল ইংরেজদের ও তার মধ্যে কি একটি দুর্মোচনীয় ব্যবচ্ছেদ-রেখা। সে যাত্রায় আমার মনের ভিতর একটা স্থায়ী ভাবের বিক্ষোভ তুললে পুণায় শহরের মধ্যে শনিবার পেট দিয়ে যেতে একটি পেশোয়া-স্তম্ভের সম্মুখীনতায়। ভারতীতে সেবার আমার একটি প্রবন্ধ বেরল—‘বাঙালী ও মারাঠি’। ‘বীরাষ্টমী’ উৎসবের বীজ মনে মনে উপ্ত হল সেই দশেরার দিনের খেলা দেখায় ও এই পেশোয়াদের বীরত্ব-স্তম্ভের সন্দর্শনে। বাঙালীর জাতীয় উৎসব পন্থায় পরিবর্তন আনিয়ে তার জাতীয় চরিত্রের আমূল পরিবর্তনের একটি সূত্র আমার হাতে ধরালেন জগৎ-ব্যাপারের মহাসূত্রধর।

 আজকাল ঘরে ঘরে, স্কুলে স্কুলে, সভায় সভায় মেয়েদের নাচ। সেকালে তাল রেখে রেখে স্টেজের উপর দু-পা চলাও গর্হিতাত্মক ছিল। একবার “আয় তবে সহচরী হাতে হাতে ধরি ধরি নাচিবি ঘিরি ঘিরি গাহিবি গান” রবীন্দ্রনাথের এই গানের সঙ্গে ছোট মেয়েদের একটু নাচের ধাঁচা ঢুকিয়ে দিলুম কত ভয়ে ভয়ে। কিন্তু তার চেয়ে সাহসিক কাজ আর একটা হয়েছিল।

 সাড়ে সাত বছরে বেথুন স্কুলে ঢুকেছিলাম—প্রায় দশ বছর পরে, আমার সতের বছর বয়সে বি-এ পাশ করে স্কুল থেকে বেরিয়ে এলুম। কিন্তু স্কুলের সঙ্গে সম্পর্ক একেবারে বিচ্ছিন্ন হল না। বছর বছর প্রাইজের সময় তদানীন্তন লেডি-সুপারিণ্টেণ্ডেণ্ট মিস্‌ চন্দ্রমুখী বসু ও পরে কুমুদিনী খাস্তগিরি আমায় অনুরোধ করে আনাতে লাগলেন মেয়েদের প্রাইজের দিনের গান-বাজনায় তৈরি করে দেবার জন্যে। আমার নিজের গান একটি শেখালুম

‘নমো নমো ভারত জননি—
বিদ্যামকুটধারিণী!
বরপুত্রের তপ-অর্জিত
গৌরব মণিমালিনী!’

এটি জগদীশ বসুকে নতুন মামার সঙ্গীত-সমাজ থেকে মানপত্র দেওয়ার উপলক্ষে রচিত হয়েছিল—অনেকেই এর আগে শোনেন নি। শত গানে স্বরলিপি আছে। বেথুন স্কুলে প্র্যাকটিস যখন চলছিল, তখন বিপিন পাল তাঁর কাগজে এই গান সম্বন্ধে একটা মন্তব্য লিখলেন—“তাঁর মেয়েরা বাড়িতে একটি নতুন গান অভ্যেস করছিল—তার কথা তাঁর কানে ভেসে এল। একটা আশ্চর্যতা অনুভব করলেন। এতদিন দেশে যত জাতীয়-

১০৩