পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সঙ্গীত রচিত হয়ে এসেছে, সবেরই ভাব হতাশাময়, অতীতের স্মরণে শোকমূলক ক্রন্দনময়। এই গানের প্রাণ আর এক রকমের—বর্তমানের উপর দাঁড়িয়ে তেজস্বিতার সঙ্গে উৎসাহময় ও ভবিষ্যতের নিশ্চিততায় আনন্দময়।” কিন্তু প্রাইজের দিন যখন স্যার গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে এই গান গীত হল তিনি—বেথুন স্কুলের একজন কমিটি মেম্বর—একটু স্বতন্ত্র হয়ে পড়লেন, উসখুস করতে লাগলেন। পরের দিন চন্দ্রমুখী বসুকে ডেকে পাঠিয়ে জানালেন—এ গান স্কুলে গাওয়ান ঠিক হয়নি—কেননা, তার শেষ লাইনগুলি হচ্ছে—

এসেছে বিদ্যা, আসিবে ঋদ্ধি
শৌর্যবীর্যশালিনী।
অপমানক্ষত জুড়াইবি মাতঃ
খর্পকরবালিনি!

 আমার সময়ে ছেলেমেয়েদের একই বিদ্যামন্দিরে co-education ছিল না। যখন আমি এফ-এ ক্লাসে উঠলুম সুধীদাদাদের মত আমারও ‘Science’ একটা পাঠ্য-বিষয় করবার প্রবল ইচ্ছা ছিল। বেথুন কলেজে তার সুযোগ নেই। আমি এডুকেশন-বিভাগে অনেক নিষ্ফল আবেদন-নিবেদন করলুম—কোন বন্দোবস্ত হল না। অবশেষে বাবামহাশয়ের বন্ধু ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকারের Science Association-এ সান্ধ্য লেকচারে যোগদানের আয়োজন হল আমার জন্যে। ভিন্ন ভিন্ন কলেজের এফ-এ ক্লাসের ছাত্রতে ভরা থাকত লেকচার হল। আমি একমাত্র ছাত্রী হলুম। প্রথমে ডাক্তার সরকার ও ফাদার লাঁফোর সঙ্গে তাঁদের ঘরে গিয়ে বসে থাকতুম, আমার সঙ্গে সুধীদাদা ও আমার দাদা থাকতেন। যখন লেকচারের সময় আসত লেকচারাররা উঠে হল-অভিমুখে যেতেন, সেই সময় আমিও উঠতুম, আমার দু-পাশে দুই দাদা থাকতেন। ছেলেরা ফিস ফিস করে বলত—‘Body-guards!’ আমাদের তিনজনের জন্যে সামনের লাইনে তিনখানা চেয়ার লাগান থাকত, ছাত্রদের জন্যে বেঞ্চ।

 এই রকম করে Physics শিক্ষা হল আমার। বেথুনে বটানি নিতে পারতুম—যার দরুন কোন apparatus-এর দরকার হত না। কিন্তু আমার দৃঢ় পণ ছিল আমি বাড়ির ছেলেদের সমান সমান Physics-ই নেব। এই লেকচার শোনা ছাড়া বাড়িতেও সাহায্য পেতুম যোগেশবাবুর কাছে—আশুবাবুর মেজ ভাই। তখনো তিনি বিলেত যাননি—মেট্রপলিটনেই

১০৪