পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

চাকরির সুবিধার জন্যে একজনরা নিজেদের মিশনরি-দত্ত ইংরেজি নামের আবরণ ছাড়েন নি। ইংরেজের scale-এ বেতন পেলেন তাতে। কিন্তু গবর্নমেণ্ট জানতে পেরে তাঁদের জোর করে ইংরেজির সঙ্গে দেশী পদবীর একটা লেজুড় জোড়াতে বাধ্য করলে, যাতে সহজেই ধরা যায় যে, আসলে নেটিভ তাঁরা এবং বেতনের হারও তাঁর কমে গেল। লীলা সিংহ তাঁর বংশগত নাম নিজে হতে পুনর্গ্রহণ করে আত্মমর্যাদা ফিরে পেলেন।

 বি-এ পাশের পর আমি দু-তিন বছর ‘ভারতী’র সেবকার্যে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে নিযুক্ত করলুম। তখনো বিয়ের কোন কল্পনাই মাথায় আসেনি—একেবারে যেন ‘আপনার মন আপনার প্রাণ আপনারে সঁপিয়াছি।’ সংস্কৃতে এম-এ দেবার জন্যে বাড়িতে প্রস্তুত হতে লাগলুম। মহেশ ন্যায়রত্ন শুনতে পেয়ে শাসালেন—“দেখব কেমন করে সংস্কৃত কলেজের ছাত্র না হয়ে বাড়িতে পড়ে এম-এ পাস করে।” আমার অধ্যাপক পণ্ডিত শীতলচন্দ্র বেদান্তবাগীশের জিদ চড়ে গেল—তিনি আমাকে পাস করাবেনই। সাংখ্যকারিকা পড়ান আরম্ভ হল। দুই-এক স্কুলে আমার প্রশ্নে তিনি অত্যন্ত প্রীত হলেন—বললেন ‘আর একটিমাত্র ছাত্র তাঁকে এই রকম প্রশ্ন করেছিল—সে হীরেন দত্ত—একখানি হীরের টুকরো।’

 কিন্তু এম-এ শেষ পর্যন্ত পড়া হল না মহেশ ন্যায়রত্নের challangeএর উত্তর দেওয়া হল না। আমার মনের ভিতর ভারি একটা চাঞ্চল্য আসতে লাগল—বাড়ির পিঞ্জর ছেড়ে বাইরে ছুটে যাওয়ার জন্যে, কোন একটা নিরুদ্দেশ যাত্রার জন্যে, ভাইদের মত স্বাধীন জীবিকা অর্জনের অধিকারের জন্যে। মাকে বাবামশায়কে বিরক্ত করে করে অবশেষে বাবামহাশয়ের সক্রোধ সম্মতি পেলুম। বাকী রইল কর্তা দাদামশায়কে জানান, তাঁর সম্মতি নেওয়া। তিনি নতুন যুগের নিজের ছেলেমেয়েদেরই স্বাধীন ইচ্ছা ও তদনুযায়ী ব্যবহারের কখনো বিরুদ্ধতা করেন না। নাতিনাত্নীদের বেলায় ত করবেনই না জানা ছিল। মেজমামা যখন মেজমামীকে বিলেত নিয়ে যান, কর্তা দাদামশায় বাধা দেননি—বিলেত থেকে ফিরলে যখন তাঁকে নিয়ে গবর্নমেণ্ট হাউসের পার্টিতে যান কর্তা দাদামশায় বাধা দেননি—যদিও যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর প্রভৃতিরা ঘরের বউকে সেখানে দেখে লজ্জায় পাশ কাটিয়ে চলে গিয়েছিলেন, দেউড়ি দিয়ে হেঁটে মেজমামী যখন গাড়িতে চড়ছিলেন, বাড়ির পুরাতন ভৃত্যদের চোখ দিয়ে দর দর করে জল পড়ছিল। মা ও মামীরা তখন গঙ্গাস্নানে গেলে বাড়ি-ভিতর থেকে পাল্কী চড়ে গঙ্গার ঘাটে পৌঁছে, পাল্কীশুদ্ধ গঙ্গায়

১০৬