পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

না থেকে সেক্সপীয়র বা গেটেকে ধরেও টানাটানি করবে বাঙালী বলে প্রতিপাদন করতে।

 আমি মহীশূরে যেদিকে দৃষ্টিনিক্ষেপ করি সেই দিকেই দেখি অতীত আজও মূর্ত হয়ে আছে। আমার মুগ্ধতায় প্রীত হয়ে দরবার বক্সি সাহেব আমার showman হয়ে আমায় চারিদিকে নিয়ে যেতে লাগলেন। তিনি একজন সংস্কারক। যেখানে অতীত সংস্কারের প্রাচীর এখনও অত্যন্ত দৃঢ় প্রথমেই সেইখানে আমায় নিয়ে গেলেন—মহারাজার কাছ থেকে খাস অনুমতি নিয়ে—পুরুষদের সংস্কৃত কলেজ পরিদর্শনে। ঘোর সনাতনী পণ্ডিতগণের মধ্যে আমাকে নিয়ে গিয়ে ফেলে অনুরোধ করলেন—“উপনিষদ থেকে দু-একটা মন্ত্র শোনাবেন এঁদের।” দক্ষিণ ভারতের ব্রাহ্মণ সংস্কৃত-অধ্যাপকেরা স্তম্ভিত। প্রথমত এক স্ত্রীলোকের দ্বারা তাঁদের অধ্যাপনাগৃহের দূর্গভেদ—তার উপর তার মুখে বেদ উপনিষদের আবৃত্তি শ্রবণ! স্বয়ং ব্রাহ্মণ নরসিং আয়েঙ্গারের এই অব্রাহ্মণ্য প্রস্তাবে তাঁরা চঞ্চল হয়ে পড়লেন। কিন্তু দরবার বক্সি তিনি, মহারাজের দক্ষিণ হস্ত, তাঁর প্রস্তাবের বিরুদ্ধে কোন আপত্তি তুলতে সাহস পেলেন না। স্ত্রীমুখে বেদপাঠ তাঁদের শুনতেই হল। আমি ব্রাহ্মধর্মগ্রন্থে কর্তাদাদামশায়ের সঙ্কলিত মন্ত্র থেকে দু-চারটি শোনালুম। সৌভাগ্যবশত আমার বৈদিক উদাত্ত অনুদাত্তাদি স্বর ও সংস্কৃত বর্ণমালার উচ্চারণ বাঙালী সংস্কৃতজ্ঞসুলভ অশুদ্ধ ছিল না। তার কারণ যোড়াসাঁকোতে অনেকগুলি দাদাদের একত্রে উপনয়ন সংস্কারের সময় যখন গুরু হেমচন্দ্রের সমীপে কয়দিন বাসকালে এবং তার পূর্বে ও পরেও দুই একমাস ধরে তাঁদের এই মন্ত্রগুলি সম্পূর্ণরূপে কণ্ঠস্থ করান হয়— আমি কর্তদাদামশায়ের কাছে আবদার ধরেছিলুম—“আমাকেও শেখান হোক।” ছেলেদের শিক্ষা সমাপ্ত হলে ওঁদের মধ্যে এ বিষয়ে যিনি শ্রেষ্ঠ গণ্য হয়েছিলেন সেই ন-মামার একমাত্র পুত্র বলুদাদাকে কর্তাদাদামশায় আদেশ করেছিলেন আমায় বাড়িতে এসে নিখুঁতভাবে ঐ মন্ত্রগুলি পড়তে শেখাতে। আদি ব্রাহ্মসমাজের আচার্যেরা যে স্বরে ও প্রকারে বেদীতে বসে বেদমন্ত্র উচ্চারণ করতেন—তা দক্ষিণী ও বেনারসী পণ্ডিতদের স্বর ও প্রকার—বাঙালী অধ্যাপক পণ্ডিতের নয়। দাদামশায় বহুব্যয়ে তাঁদের আনিয়ে আচার্যপদে নিযুক্ত করেছিলেন। সুতরাং মহীশূরের পণ্ডিতেরা আমার উচ্চারণে তাঁদের উচ্চারণ থেকে কোন প্রভেদ পেলেন না। একালে মেয়ের মুখে উপনিষদ শোনায় একটা

১১০