পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দিনও আর সে অবসর পেলে না।

 বাঙলা দেশেই বোনেরা সেদিন ভাইকে নিমন্ত্রণ করে খাওয়ান, কিছু না কিছু উপহার দেন। কিন্তু বাকি সারা ভারতবর্ষে—দক্ষিণে উত্তরে পশ্চিমে—সেদিন ভাইরাই বিশেষ করে বোনকে কিছু না কিছু দ্রব্য বা অর্থ দেন। বোন শুধু সিদুঁর চন্দনের টিপ এবং মিষ্টান্ন ভাইয়ের জন্যে প্রস্তুত রাখেন, আর একগাছি মঙ্গলসূত্র ভাইয়ের হাতে বেঁধে দেন। যদি ভাই বিদেশে থাকেন, তবে ডাকযোগে যথাদিনে তাঁর হাতে পৌঁছিয়ে দেন—খ্রীশ্চানদের নিউ-ইয়ার্স বা ক্রীসমাস কার্ডের মত। বাঙলার দায়ভাগ ও অন্যান্য প্রদেশের মিতাক্ষরাজনিত উত্তরাধিকারগত পার্থক্যের সঙ্গে ভ্রাতৃ-দ্বিতীয়াতে ভাইবোনদের পরস্পরের প্রতি দৃষ্টিকোণের পার্থক্যের সূক্ষ্ম যোগ আছে কি? মোটের উপর দেখেছি, বঙ্গেতর বাকি ভারতবর্ষে কন্যা ও ভগ্নীর প্রতি পিতামাতা ও ভাইয়ের স্নেহশীলতা ও দেওয়ার প্রবণতা অত্যন্ত বেশি। যেন যত দাও কিছুতেই পর্যাপ্ত দেওয়ার তৃপ্তিবোধ হয় না। সে-সব দেশে আমাদের দেশের মত বরপণ-প্রথা ছিল না, শ্বশুরকুল থেকে কোন রকম দাবী আসত না, কারণ দেশাচার ও কুলাচার দাবীর অপেক্ষা না রেখে স্বতই মেয়েদের যথাসাধ্য দিত। শুধু বিয়ের সময় নয়, মেয়ে যতবার পিতৃগৃহে আনাগোনা করত ততবারই। মেয়েকে দেওয়ার রীতির এত বাড়াবাড়ি ছিল যে, রাজপুতবংশে সেই জন্যে মেয়েকে একবার জামাতার হস্তে সমর্পণ করে আর কোন দিন বাড়ি আনতে সাহস করত না, পাছে তাতে বাপের আত্মসম্মান রক্ষার্থে প্রায় সর্বস্বান্ত হতে হয়। অবস্থা বুঝে পিতৃভক্ত মেয়েও সেইজন্যে আসতে চাইত না—জানত তাতে মা-বাপকে কত বিপন্ন করা হবে। আর ‘কুমারী’ অবস্থায় কন্যার আদরের কথা বলেই শেষ হয় না। দুর্গাপূজায় যে ‘কুমারীপূজা’ বিহিত আছে সেই—দেবীপ্রতিমা চক্ষেই হিন্দু-ভারতে কন্যাকে দেখা হয়। এমন কি, কন্যা পিতামাতা বা বড়ভাইদের পাদস্পর্শ করে কখনো প্রণাম করে না—তাতে তাঁদেরই অকল্যাণ-ভয়—পুত্রবধূরা বা ছোটভাজেরা করে। ছোট ছোট খুঁটিনাটির পার্থক্যগুলির ভিতর দিয়ে যে একটি সাধারণ ঐক্যসূত্র দেখা যায়, সেই ঐক্যে হিন্দু-ভারত পালপার্বণে বাঁধা।

 মহীশূরে দেওয়ালীতে আর একটি মিলনসূত্র পেলুম, যদিও তারও ভিতর পার্থক্য আছে। বঙ্গেতর ভারতের সর্বত্র দেওয়ালী শুধু রাত্রে আলো জ্বালান ও বাজি-পোড়ানর দিন নয়—এটি নতুন খাতার দিন।

১১৪