পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ছবি। বোধ হয় তাঁর আর কোন সমবয়সী বন্ধ ছিল না যাকে এমন করে হৃদয় ভরে লিখে আরাম পান। এমন নবপুলকের দিনে একজন কাউকে চাই—যাকে সব বলেই সুখ—আনন্দ ও ভয় দুই-ই।

 এর অনেক বৎসর পরে একবার মাত্র এ‘র সঙ্গে আমার বম্বেতে দেখা হয়। তখন তিনি পুরামাত্রায় বম্বে সমাজের অঙ্গীভূত লেডি টাটা—অনেকানেক কমিটির মধ্যে একটি স্বদেশী এক্‌জিবিশন কমিটির সদস্যা—মহীশূরের সেই বালিকা “মিস্‌ ভাভা” আর নয়। দোরাব টাটা ও লেডি টাটা দুজনেই এখন গতায়ু। তাঁরা শেষ পর্যন্ত নিঃসন্তানই ছিলেন। দোরাবের ছোট ভাই রতন টাটাও নিঃসন্তান অবস্থায় ১৯১৪-র জগৎ-যুদ্ধে জার্মান টর্পেডোর দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মত্যু-কবলিত হন। বদ্ধ জামশেদজীর বংশে বাতি দিতে কেউ নেই। তাঁর কীতিই তাঁর বাতি।

 মহীশূর প্রবাসকালে আর একটি পরিবারের সঙ্গে আমার সৌহার্দ্য হল—তাঁরা মুসলমান ও বাঙ্গালোরে থাকেন। স্বামী ডেপুটি কলেক্টর মিস্টার সুজাতালি-ইউ পি-তে আদিবাস। স্ত্রী বাঙলার মেয়ে, তাঁর ভাইরা বাঙলায় উচ্চপদস্থ কর্মচারী ছিলেন। মিসেস্‌ সুজাতালি আমার কথা জানতে পেরে স্বয়ং একদিন বাঙ্গালোর থেকে মহীশূরে এসে আমার সঙ্গে দেখা করে একটা শনি-রবিবারে তাঁদের ওখানে আমার যাওয়া ও থাকার ব্যবস্থা করে গেলেন। একবার নয়—তাঁর পীড়াপীড়িতে এমন দু-চার বার শনি-রবিবারে তাঁদের ওখানে আমার যাওয়া-আসা ও থাকা হয়েছিল। শিক্ষিত মুসলমান পরিবারের সঙ্গে সহজেই আমার মিত্রতা জমে গেল। এস্থলে এ সৌহার্দ্যের মূলে ছিল মিসেস্‌ সুজাতালির বাঙলার প্রতি টান। অনেককাল পরে যখন আলিগড়ে আলিগড় ইউনিভার্সিটি দেখার জন্যে সেখানকার কর্তৃপক্ষরা আমাকে আমন্ত্রণ করেন— একটি প্রকাণ্ড শহরে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে যেন তার প্রতি অংশ পর্যটন করানর মত করে আমাকে সব কিছু দেখিয়ে বেড়াচ্ছেন, সেই সময় লক্ষ্য করলুম একটি যুবক সব সময়ই আমাদের সঙ্গে রয়েছে। পরে সে নিজের পরিচয় দিলে—সে বাঙলা দেশ থেকে আসা একটি মুসলমান ছাত্র। বাঙলার একজন মহিলাকে তার ইউনিভার্সিটিতে দেখে তার যে আনন্দ হয়েছে—ঘণ্টা কতকের মত তাঁর সঙ্গলাভে সেই আনন্দ থেকে বঞ্চিত করতে পারছে না নিজেকে। তাই সঙ্গে সঙ্গে ঘুরছে। আর একবার বর্মায় রেঙ্গুনের নিকটবতী পেগু শহরে প্রসিদ্ধ শয়ান বুদ্ধের মূর্তি দেখে মধ্যাহ্ন অতীত হলে রেলওয়ে রেস্তরাঁতে গিয়ে বসলুম, আমার গুজরাটি সহচর কিছু

১২১