পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তালে সকলের পা আপনিই পড়ছে—ইচ্ছে করুক আর না করুক। দলে দলে স্কুল-কলেজের ছেলেরা আমার সঙ্গে দেখা করতে আরম্ভ করলে—বয়স্কেরাও পিছিয়ে রইলেন না—অনেকেই, যাঁরা পরে নামজাদা হয়েছিলেন। আমি তাঁদের থেকে বেছে বেছে একটি অন্তরঙ্গ দল গঠন করলুম। ভারতবর্ষের একখানি মানচিত্র তাদের সামনে রেখে সেটিকে প্রণাম করিয়ে শপথ করাতুম তনু মন ধন দিয়ে এই ভারতের সেবা করবে। শেষে তাদের হাতে একটি রাখি বেঁধে দিতুম, তাদের আত্মনিবেদনের সাক্ষী বা badge। হুমায়ুন যেমন এক রাজপুত কন্যার রাখি গ্রহণ করে তার হয়ে বিপদ বরণ স্বীকার করেছিলেন, ছেলেদের তেমনি আমার হাতে এ রাখি-গ্রহণ মাতৃভূমির সেবা গ্রহণের জন্যে বিপদ বরণের স্বীকৃতি। আমার রাখি-বাঁধা দলটি একটি গুপ্ত সমিতি নয়; তবু সঙ্কল্প মনে মনে রাখলেই উদযাপনের দঢ়তা হয় বলে মুখে মুখে রটান বারণ ছিল।

 তত্রাচ নাটোরের মহারাজা জগদিন্দ্রনাথ রায়ের কাছে খবরটা পৌঁছল। তিনি রঙ্গরসে, আমোদে-কৌতুকে অনেককে টানতেন।

 আশু চৌধুরীর আমার প্রতি ভারি স্নেহ ও শ্রদ্ধা। তিনি আমায় একদিন বললেন—“সরলা সাবধান হয়ো। নাটোরের বৈঠকে বলাবলি চলছে—সরলা দেবী দেশের ছেলেদের বীর করে তুলবেন বলে তাদের হাতে একটা করে লাল সুতো বেঁধে বেঁধে দিচ্ছেন। এতে পুলিসের কান খাড়া হচ্ছে।”

 বছর কত পরে বঙ্গভঙ্গের দিনে এই লাল সুতোর রাখিবন্ধন দেশময় ছড়াল—রবীন্দ্রনাথের নেতৃত্বে নাটোরও তাতে বাঁধা পড়লেন।

 যেসব ছেলেরা তখন আমার কাছে আসত তার মধ্যে মণিলাল গাঙ্গুলী বলে একটি ছেলে ছিল। সে Dawn পত্রিকার সম্পাদক সতীশ মুখুয্যের ভাগিনেয়। সতীশবাবুও মাঝে মাঝে এসেছেন। মণিলালের সাহিত্যের দিকে একটু ঝোঁক ছিল। তার পরিচালিত একটা সাহিত্য-সমিতি ছিল ভবানীপুরের ছেলেদের। সে একদিন আমায় অনুরোধ করলে তাদের সাম্বৎসরিক উৎসবের দিন আসছে আমি যেন তাতে সভানেত্রীত্ব করি। যদিও নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে দেশ-বিদেশ ঘুরে এসেছি—কিন্তু কলকাতা শহরে ছেলেদের সভায় উপস্থিত হওয়া ও সভানেত্রীত্ব করা তখন আমার কল্পনার বাইরে। আমি ইতস্ততঃ করতে লাগলুম। সে আবার পীড়াপীড়ি করাতে আমি একটু ভেবে তাকে বললুম—“আচ্ছা, তোমাদের সভায় সভানেত্রীত্ব করতে যাব—এটাকে যদি তোমাদের সাহিত্যালোচনার ১২৭

১২৭