পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 নজর পড়েছিল আমার যে রাজপুত বীরবালক বাদল প্রভৃতির কীর্তি পড়ে আমরা বাঙালীরা অভিভূত হই, তাদের গৌরবে গৌরবানুভব করি, কবিতা বানাই, কিন্তু বাঙালীর ঘরের ছেলে উদয়াদিত্য যে মোগলদের বিরুদ্ধে বাঙালীর স্বাধীনতা রক্ষার চেষ্টায় সম্মুখ-সমরে দেহপাত করেছিলেন—তার খবর কিছুই রাখিনে। তার স্মৃতি বাঙালী যুবকের ধমনীতে ধমনীতে প্রবাহিত করে দেওয়ার দরকার। আমার কাছে তখন যেসব ছেলেরা আনাগোনা করতেন, তার মধ্যে অনেক বি-এ, এম-এ ছিলেন, কলেজের প্রোফেসরও ছিলেন। শ্রীশচন্দ্র সেন তার মধ্যে একটি। ইনিই উদয়াদিত্য-উৎসব সম্পাদনের ভার নিলেন। আমি ইণ্ডিয়ান মিররের এডিটর ও এলবার্ট হলের অন্যতম ট্রাস্টী বৃদ্ধ নরেন্দ্রনাথ সেনকে লিখে, টাকা পাঠিয়ে হল ভাড়া করিয়ে দিলুম উৎসবের জন্যে। উদয়াদিত্যের কোন ছবি ত নেই। উৎসবগৃহে তাঁর পরিচায়ক কি থাকতে পারে? ভেবে দেখলুম ক্ষত্রিয় বীরের আত্মার প্রতিরূপ তাঁর তরবারি। সুতরাং একখানি তরবারি স্টেজের উপর থাকবে,—সভাসীনেরা উদয়াদিত্যকে স্মরণ করে তাতেই পুষ্পাঞ্জলি দেবে। সব আয়োজন সম্পূর্ণ হয়েছে, একজন হিন্দুস্থানী জমিদারের কাছ থেকে হীরা-জহরতের হাণ্ডিলওয়ালা সুন্দর ঝকঝকে একটি তলোয়ার যোগাড় হয়েছে, ক্ষীরোদ বিদ্যাবিনোদ প্রেসিডেণ্টের আসন গ্রহণ করবেন স্থির হয়েছে, হ্যাণ্ডবিল প্রচুরভাবে ছড়ান হয়েছে, বিকেল চারটেতে মিটিং, আয়োজনকারীরা বেলা দশটা থেকে সেখানে মোতায়েন—এমন সময় ঠিক বারটার সময় দৌড়তে দৌড়তে শ্রীশবাবু বালিগঞ্জে এসে হাজির—তখন আমরা কাশিয়াবাগান থেকে বালিগঞ্জে উঠে এসেছি। এসে বললেন—“নরেন সেন লোকের হাতে চিঠি পাঠিয়েছেন এলবার্ট হলে মিটিং হতে পারবে না। কারণ, তিনি শুনেছেন, ছেলেরা নাকি তলোয়ার পূজা করবে। এসব ভয়াবহ রাজবিদ্রোহাত্মক কাজ—তাতে তিনি অনুমতি দিতে পারেন না।”

 আমি শ্রীশবাবুকে বললুম—“যত টাকাই লাগুক, অন্য কোন স্থান, কোন থিয়েটারের স্টেজ হোক, যাই হোক, ভাড়া করে হাতে রাখুন। আমি ইতিমধ্যে নরেনবাবুকেও চিঠি লিখে দেখছি ফের এলবার্ট হলেই করাতে পারি কিনা।”

 আমি বৃদ্ধকে লিখলুম—“আপনি পরম হিন্দু—ভাল করেই জানেন হিন্দুর পূজা তিন রকমে হয়—ঘটে পটে ও খড়্গে। পটের অভাবে এক বীর ক্ষত্রিয়ের আত্মার প্রতিনিধিস্বরপ বাঙালী ছেলেরা খড়্গে তাঁর

১৩০