পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 ইংরেজীতে প্রবাদ আছে—

 "The battles of England are fought and won in the fields of Eton."

 Eton-এ ফুটবল ক্রিকেট খেলতে খেলতে একদলের তার বিরুদ্ধ দলের সঙ্গে যে মারপিটের অভ্যাস হয়, সেই অভ্যাস ইংরেজকে স্বদেশরক্ষার্থ বা পরদেশ-বিজয়ার্থ যুদ্ধে তৎপর করে। কলকাতায় মোহনবাগান তখনো ময়দানে নামেনি। সেকালে মেডিক্যাল কলেজের ফিরিঙ্গিদের সঙ্গে হিন্দু কলেজের ছেলেদেরই খেলা চলত এবং অনেক সময় দুদলে রক্তারক্তি খুনোখনিও হত শোনা যায়—হিন্দু কলেজের ছেলেরা প্রতিবারই পরাস্ত প্রতিপন্ন হত। এবারে আমার ক্লাবের ছেলেদের কাছে গল্প শুনলুম আগের দিন মাঠেতে হিন্দু ছেলেরাই খেলায় জিতেছিল, Umpire-এর অপক্ষপাত নির্ধারণও তাই হয়েছিল, কিন্তু তার পরে ফিরিঙ্গ ছেলেরা আক্রোশে দল বেঁধে একপাল উন্মত্ত ষাঁড়ের মত যেমন তাদের তাড়া করলে তারা পালিয়ে প্রাণ বাঁচালে—“যঃ পলায়তি স জীবতি’’—এই নীতির অনুসরণে। একটা হিন্দু ছেলেও তাদের সম্মুখীন হল না। আমি বর্ণনাকারীদের জিজ্ঞেস করলুম—“তোমরা কজন ছিলে? কি করলে?” তারা বললে—“আমরা দশবারজন ছিলুম। আমরা কি করতে পারি? আমরাও সরে পড়লুম।”

 আমি তাদের ধিক্কার দিয়ে উঠলাম। বললুম—“বৃথা তোমাদের অস্ত্রবিদ্যা শেখা, বৃথা তোমাদের এখানে লাঠি ঘোরান। কাল থেকে আর এসো না।” তারা লজ্জিত হয়ে অবনত-মস্তকে রইল। তারপরে মাঠে খেলায় জিতেও ফিরিঙ্গির তাড়নায় বাঙ্গালীদের পলায়ন উপলক্ষে ভারতীতে আমার প্রবন্ধের পর প্রবন্ধ বেরুতে থাকল। মহাভারত থেকে সেই কাহিনী শোনালুম যাতে পাওয়া যায়—শ্রীকৃষ্ণের পুত্র অনিরুদ্ধ রাজা সাম্বর সঙ্গে যুদ্ধে আহত ও সংজ্ঞাশূন্য হলে তাঁর সারথি যখন তাঁকে নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলাতক হয়, তিনি সংজ্ঞালাভ করে জানতে পেরে তাকে ভর্ৎসনা করে বলেন—“এ কি করলে? আমার নাম চিরকালের জন্যে বীরসমাজ থেকে মুছে দিলে? যদুকুলবৃদ্ধেরা কি বলবেন? আমি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন করেছি শুনে আমার পিতা-পিতৃব্যেরা কি মনে করবেন? যদকুলললনারা কি আমায় কাপুরুষ কুলকলঙ্ক বলে ঘৃণা করবেন না? ফিরাও ফিরাও রথ—আমায় যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়ে চল, ফের সারথি।”

১৩৭