পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

করেছিল। বললে সুহৃদ সমিতি নামে একটি দল বাঁধা তারা কয়েকটি ছেলে একটি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছে যে গবর্নমেণ্টের চাকরি খুঁজবে না, নিজেরা একটা বড় রকম জমি নিয়ে স্বহস্তে চাষবাস করে নিজেদের প্রতিপালন করবে। সে জন্য তাদের পাঁচশ টাকা মূলধনের দরকার। সুরেন বাঁড়ুয্যে প্রভৃতি দেশের অনেক নেতাদের কাছে গিয়ে নিজেদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বলে ঐ পাঁচশ টাকা ধার চেয়েছে—বছর দুয়েকের মধ্যে টাকাটা ফিরিয়ে দিতে পারবে এই আশাও প্রকাশ করেছে। কিন্তু কেউ তাদের বিশ্বাস করে টাকা দেননি। শেষে আমার কাছে এসেছে, যদি আমি দেশের ছেলেদের প্রতি বিশ্বাস রাখি, টাকা দিই। জমি প্রায় যোগাড় হয়েছে—মৈমনসিং গৌরীপুরের জমিদার ব্রজেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর অনুগ্রহে। তিনি আসাম প্রদেশের পাদতলস্থ তাঁর জমি থেকে প্রায় এক হাজার বিঘা তাদের lease দিতে প্রস্তুত আছেন যদি নিজেরা চাষবাস করে। কিন্তু হাল জোৎ গরু ও বীজ প্রভৃতির জন্যে পাঁচশ টাকা গোড়ায় সংগ্রহ না হলে জমি নেওয়া তাদের বৃথা, তাই এখনো নেয়নি। বড় আশা করে আমার কাছে এসেছে। আমি কি দেব তাদের টাকা? তাদের দলে বিশটি ছেলে আছে যারা এই কাজের জন্যে প্রস্তুত।

 আমি স্থির জেনে নিয়েছিলুম দেশের ছেলেদের মানুষ করে তোলার যে কাজে আমি নেমেছি তাতে ফিরে পাবার আশা না রেখেই অনেক টাকা ঢালতে হবে। সেগুলো হিসেবের খাতাতে bad debts-এর ঘরেই ফেলতে হবে। আমরা অনেকেই অনেকদিন ধরে প্লাটফর্মে প্রেসে অনুযোগ আনছি, চাকরি ছাড়া বাঙালী ছেলেদের কি গত্যন্তর নেই? স্বাধীন জীবিকার কোন পথই নেই? আমাদেরই সকলের অনুপ্রেরণায় এই ছেলেরা একটা পথ খুঁজে নিয়েছে। এখন যদি তাদের নিরুৎসাহ করি, প্রয়োজনকালে টাকার সাহায্য দিয়ে তাদের সেই পথে অগ্রসর করে না দিই, তবে আমাদের নিজেদের উক্তিতে নিজেদেরই অবিশ্বাস প্রমাণ করা হবে না কি? টাকাটা ঋণ বলেই দেব, কিন্তু ঋণ ফিরে পাবার আশা রাখব না—এই মনস্থ করলুম। হতে পারে এই ছেলেরা ঠগ, হতে পারে সরলমনে চেষ্টা করেও এরা কৃতকার্য হবে না—টাকাগুলি জলেই যাবে, তবু এইভাবে কোন কোন দিকে টাকা ডোবানর জন্যে প্রস্তুত থাকতে হবে। আমি কেদার চক্রবর্তীকে বললুম—“দেব আমি টাকা, কিন্তু ব্রজেন রায়চৌধুরী যে তোমাদের জমি দিতে প্রস্তুত আছেন, সে বিষয়ে তোমাদের সঙ্গে তাঁর পত্র-ব্যবহার দেখতে চাই।”

 

১৩৯