পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বিশেষরূপে প্রথিতনামা হন। তাঁরা আমাদের পরিবারস্থ কারো কারো ফরমাসে ভারতীয় বিষয়ের অনেকগুলি চিত্র আঁকলেন। য়ুরোপীয়দের মত ক্যানভাসের উপরে নয়, রেশমের উপর আঁকেন জাপানীরা। তাতে ভারি একটি মোলায়েম ভাব হয়। আর তাঁদের তুলির স্পর্শ যে কি সুকোমল, রঙগুলি যে কি সুমোহন হয়ে ফোটে, তা চিত্রশিল্পী মাত্রে জানেন। আমার ফরমাসে একজন ইয়োকোআনা কালী ও একজন হিষিদা সরস্বতীর ছবি আঁকলেন। সে দুখানিই আমার ঘরে আজও বিরাজিত এবং দর্শকমাত্রের দৃষ্টি ও চিত্ত-আকর্ষক। যদি বোমা পড়ে, তবে রামের বোমাতেও যাবে, রাবণের বোমাতেও যাবে—এই ভয় মনে পোষণ করেও ছবি দুখানি রেখেছি সযত্নে যুদ্ধের আজ তিন-চার বছর ধরে নিজের বসবার ঘরেই। এ দুখানির ফটো সে সময়কার প্রবাসীতে বেরিয়েছিল—তখন ভারতী সচিত্র ছিল না। ‘কালী’র ছবিটি ঠিক সচরাচর দৃষ্ট কালীর ছবি নয়। তার কল্পনায় যে নূতনত্ব ছিল তার ব্যাখ্যান দিয়েছিলুম প্রবাসীতে।

 সুরেন মহাভারতের ‘গীতা’ কথনের সময়কার ছবি আঁকিয়েছিলেন, তাঁর প্রণীত ‘সংক্ষিপ্ত মহাভারত’ পুস্তকের অন্তঃপৃষ্ঠায় তার ফটো সন্নিবিষ্ট আছে। শ্বেত অশ্বযুগলের রথে অর্জুন ও শ্রীকৃষ্ণ দুজনে সমাসীন। সে ছবি শ্রীকৃষ্ণের তেজোময়তার একটি আদর্শ ছবি। গগনদাদা ও অবনদাদা রাসলীলা ও অন্যান্য হাল্কা রসাত্মক বিষয়ের ছবি আঁকিয়েছিলেন। সে রাসলীলার ছবিখানি একটু একটু মনে পড়ে—কি অপার্থিব চন্দ্রালোক, কি আকাশবৎ সূক্ষ্ম বায়বীয় উত্তরীয় গোপীদের, কি নৃত্যভঙ্গি! এগুলি প্রকাণ্ড বড় বড় ছবি। আমার পঞ্জাব অবস্থানকালে জাপান গবর্নমেণ্টের দূত এসে তাদের আর্টিস্টের অঙ্কিত অমূল্য ছবিগুলি তাদেরই দেশে থাকা উচিত বলে সুরেনের ও গগনদাদাদের ছবিগুলি বহুমূল্যে ক্রয় করে নিয়ে গেল। আমার দুখানি আমার সঙ্গে পঞ্জাবেই ছিল—তাই বেঁচে গেছে, এখনও ভারতবর্ষেই রয়ে গেছে।

 এই আর্টিস্টদের সমসাময়িককালে ‘প্রিন্স হিতো’ বলে জাপানী রাজবংশের একটি ছেলে আসেন। তিনি সন্ন্যাস গ্রহণ করেছিলেন এবং ভারতবর্ষের তীর্থস্থান দেখে বেড়াচ্ছিলেন। এ‘কে দেখতে অনেকটা ত্রিপুরার রাজবংশের একটি সুন্দর ছেলের মত—একটি ভারি সৌকুমার্য আছে শরীরে, মুখে ও মনে। তাঁর সরল, সাদাসিদে অথচ সবিনয় ভদ্রব্যবহারে সকলে মুগ্ধ হয়েছিলেন। যেন পথহারা পথিকের মত পৃথিবীতে

১৪৯