পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

জিনিসে সাজান। পরদাগুলি ভারতবর্ষের নানা প্রদেশের ছাপান কাপড়, ঘরের টেবিল, টি-পয়, চেয়ার, সোফা কিছুই ল্যাজারসের বাড়ির নয়, কিন্তু সবই মনোরম খাঁটি স্বদেশী জিনিস, দেখে সকলের চোখ তৃপ্ত হল। তারপরে অনেকে মিলে একটি লিমিটেড কোম্পানী করে যোগেশবাবুর পরিচালনায় বৌবাজারে ‘স্বদেশী স্টোরস’ নাম দিয়ে একটি দোকান খুলিয়ে দিলেন। আমার ও যোগেশবাবুর স্বদেশী-প্রচেষ্টা বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের বহু পূর্বেই। এই সময় বম্বেতে কংগ্রেসের সঙ্গে সঙ্গে একটি বিরাট স্বদেশী একজিবিশন হয়। কোন কোন বম্বে বন্ধুর অনুরোধে আমি তাতে ‘লক্ষী-ভাণ্ডার’ থেকে অনেকানেক জিনিস পাঠাই—তার দরুন একটি মেডেল পাই। সে মেডেলটিকে পিন লাগিয়ে আমি ব্রোচ করে পরতুম। প্রায় পনর বৎসর পরে মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে যখন পরিচয় হয়, তখনও আমার শাড়ি এই ব্রোচে আটকান থাকত। তাই দেখে তিনি চিনেছিলেন, তাঁর ভারতে অভ্যূদয়ের অনেক পূর্ব থেকেই আমি ‘স্বদেশী’। তাঁর সঙ্গে অনেক সভাস্থলে যখন নিয়ে যেতেন, সেই পরিচয়ই আমার দিতেন। সে মেডেলটির design অতি সুন্দর, সেটি এখনও আমার কাছে আছে। সে সময় কলকাতায় ১১ই মাঘের রাত্রে বা বিবাহাদি উৎসবে এ-বাড়ি সে-বাড়িতে আমার আপাদমস্তক স্বদেশী বৈশভূষার লালিত্যে লোকেদের চোখ খুলে গেল যে, কিছুমাত্র বিদেশী পরিধেয়ের সংস্রব না রেখে, কেবলমাত্র ‘স্বদেশী’তেই যথেষ্ট সৌখীনতা ও ফাশনের পরাকাষ্ঠা দেখান যেতে পারে। মনে পড়ে আমাদের আত্মীয় মেয়েদের মধ্যেও কেউ কেউ তখনো পর্যন্ত আমার পায়ের দিশী নাগরা জুতোটা সইতে পারতেন না—বিদেশী গোড়ালিওয়ালা জুতোতে সকলেই এত অভ্যস্ত। যাঁরা গোড়ায় গোড়ায় বিমুখ ছিলেন—এমন একদিন এল যখন তাঁরাই নামজাদা ‘স্বদেশী’ হয়ে পড়লেন, নাগরা ছাড়া আর কিছু তাঁদের শ্রীচরণে-শু হল না।

 লাঠি গৎকার ক্লাবে যোগদানের উপলক্ষে নানা লোক আমার সঙ্গে দেখা করতে আসত ও নানা আলোচনা করত বলেছি। একদিন দুইজন সিলেটি ভদ্রলোক এসে চা-বাগানের কুলিদের উপর সাহেব প্ল্যাণ্টারদের অত্যাচারের কথা বললে। সাহেবদের এজেণ্ট দিশী রঙরুটেরাই অজ্ঞ কুলিদের কি রকম মিথ্যা কথা বলে প্রলুব্ধ করে ভুলিয়ে ভালিয়ে কাগজে সই করিয়ে দাস্য-বৃত্তিতে ভর্তি করে, সেই সকল লোমহর্ষকর কাহিনী বর্ণনা করলে, ডাক্তার সুন্দরীমোহন দাস প্রমুখ একদল দেশভক্তেরা

১৫৩