পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

জায়গা থেকে সর্বদেহে রক্ত চলাচল হচ্ছে তার ধারণা করতে হবে। কুলিদের উপর অত্যাচারের কথা শুনতে শুনতে আমার মনে এতগুলো কথা খেলে গেল। আজ অনুভব করলাম আমরা যারা আরামে আয়েশে মানুষ তাদের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা একটা ভাবের বিলাস মাত্র। পরাধীনতার বা “দাসত্ব-শৃঙ্খলের’’ প্রকৃত মর্ম আমরা কি জানি? হাড়ে হাড়ে জেনেছিল আমাদের এক পুরুষ আগে নীলকুঠির ক্রীতদাসেরা, যার ফলে নীল-বিদ্রোহ হয়েছিল; আর এখন জানছে এই ‘indented’ চাবাগানের কুলিরা। উৎপীড়ক লুণ্ঠকদের পশ্চাতে আছে প্রথমত তাদের স্বজাতির বন্দুক ও কামান, দ্বিতীয়ত ইংলণ্ডের প্রজারই হিতকল্পে ও ভারতীয় প্রজার ক্ষতিকল্পে গঠিত ভারত গবর্নমেণ্টের আইন-কানুন। যতদিন না এই দুটোর উপরই আমাদের দখল আসবে, ততদিন ‘নিজ বাসভূমে আমরা পরবাসী’। যতদিন ‘অশনে বসনে গমনের তরে রবে নির্ভর নিত্য পরের করে’—ততদিন হে ভারত আমার, হে আমার মাতৃভূমি, যদিও ‘পর দীপমালা নগরে নগরে তুমি যে তিমিরে তুমি সে তিমিরে’।

 এই ইংলণ্ডের ইতিহাসই আমাদের গুরু হয়ে শেখাচ্ছে—একটা অত্যাচারী রাজের বিরুদ্ধেও দাঁড়াবার শক্তি আসে, একজন King Johnএর কাছ থেকেও Magna Charta আদায় করা যেতে পারে প্রজাশক্তি সংহত করতে পারলে, জাতির আপামর সাধারণের ছিন্নভিন্নতা দূর করে যৌথবল গড়ে তুলতে পারলে। ভারতবর্ষের ইতিহাস থেকে শিক্ষা পাওয়া যায়—কংস ও জরাসন্ধের মত অত্যাচারী রাজার হাত থেকে প্রজাদের উদ্ধারের জন্য শ্রীকৃষ্ণের উদয়ের অপেক্ষা করতে হয়। ইংলণ্ডের ইতিহাস শেখায়—দৈবলীলার অপেক্ষা না রেখে একজন স্বার্থপর, অত্যাচারী নিষ্ঠুর King Charles-এর মুণ্ডপাতের পাতকীবৎ বুদ্ধি ক্রমওয়েলের মত এক একটা মানুষের মত মানুষকেই পোষণ ও সাধন করতে হবে, তার জন্য দল সষ্টি করতে হবে। তারই নাম দৈবলীলা, মানুষের ভিতর দিয়েই দৈবশক্তির ক্রিয়া ইংলণ্ডের ইতিহাস শেখায়। পার্লামেণ্ট বা প্রজাদের প্রতিনিধি সভা যা, তা দেশের সর্বসাধারণের পঞ্চায়েৎ, House of Lords ও House of Commons এই দুই ভাগে বিভক্ত হলেও সাধারণী প্রজাবলই বলীয়ান হয়ে জমিদারদের কাছ থেকে সাধারণ্যের স্বার্থ-বিরোধী Corn Law-র ‘Repeal’ করাতে সক্ষম হয়।

 সব দাঁড়াচ্ছে গিয়ে একতা-সাধনায়। একতা কিসে হয়; স্বার্থ যদি এক হয়, তবে লক্ষ্যও এক হবে। যাতে তোমার অপকার তাতে আমারও

১৫৫