পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

একটা ক্ষেত্র, যেখানে কোন পুরুষ কোন মেয়ের জন্য ‘seat’ ছাড়তে পরাঙ্ম‌ুখ, সবাই ‘আপ-কা-ওয়াস্তে’—তাই অল ইণ্ডিয়া কংগ্রেস কমিটি থেকে আরম্ভ করে বেঙ্গল কৌন্সিল-এসেমব্লি পর্যন্ত মেয়েদের জন্যে গুটিকত আলাদা ‘seat’ নির্ধারিত করা হয়েছে, সেই কটি দখলের জন্যে মেয়েরা পরস্পরের সঙ্গে যত চাও লড়াইদাঙ্গা আঁচড়া-আঁচড়ি কামড়াকামড়ি কর তাতে পুরুষদের আপত্তি নেই, তাতে বরঞ্চ এক একটি মেয়ের পিছনে এক এক দল পুরুষ তাঁদের পৃষ্ঠপোষক বা পৃষ্ঠত্রাণ হতে প্রস্তুত আছেন, দেবী ভগবতীর পিছনে দেবসৈন্যদলের মত। কিন্তু মেয়েরা যদি পুরুষ দেবতাদেরই বলে বসেন—“তোমার সিংহাসনটা আমায় ছেড়ে দাও না ভাই” —তাহলেই বিপদ, তাহলেই পুরুষের পৌরষ বেরিয়ে পড়ে চোখ রাঙা করে বলে “কভী নেই।” কর্পোরেশনের হলে যেখানকার কৌন্সিলার বা অল‍্ডারম্যানের নির্বাচনে মেয়েদের জন্যে কোন ‘রিজার্ভেশন’ নেই সেখানে মেয়েদের পদক্ষেপ অতি দুরুহ—যোগ্যতার সেখানে কোন আদর নেই, স্ত্রীত্বের কোন সমাদর নেই, পুরুষার্থ সেখানে কেবলই স্বার্থগত; রাজনৈতিক কোন প্রতিষ্ঠানের শিরোদেশে তখনই কোন মেয়েকে শিরোধার্য করা হয়, যখন তাঁর আড়ে কতিপয় পুরুষদের কর্তৃত্ব নির্বিবাদে বজায় রাখার প্রয়োজন বোধ হয়। সেটাও রাজনীতি। সাহিত্য-ক্ষেত্রে স্ত্রীপুরুষগত রেষারেষি দ্বেষাদ্বেষির সমস্যা আসে না—যদি না সাহিত্যকে একটি পণ্যক্ষেত্র করা যায়। যাঁরাই সাহিত্যকে নিজের জীবিকার্জনের একটি মুখ্য উপায়রুপে আঁকড়ে ধরেছেন তাঁরাই অন্য সমব্যবসায়ীদের প্রতি বিরুদ্ধেভাব ধারণ করেন। হোক সে পুরুষ হোক সে স্ত্রী। সেখানে কথাটা দাঁড়ায় “তোমার মুখে দুটো বেশী ভাত পড়বে না আমার।তোমার ঘরে দুখানা বেশী কাপড় আসবে না আমার।” সেখানে সাহিত্যসেবার অনাবিল আনন্দ চলে যায়, তাতে মিশে যায় স্বার্থহানিবৃদ্ধিগত উদ্বেগ, ভয়, আশা ও ক্ষোভ।

 আমার সাহিত্যসেবায় প্রয়োজনের তাগিদ ছিল না, তাই আমি অর্থলাভের দিক দিয়ে নিরুদ্বিগ্ন ছিলম। বরঞ্চ ভারতীর আয়ব্যয় খতিয়ে দেখতে পেলুম মাসে—মাসে কাগজ, ছাপা, ম্যানেজমেণ্ট প্রভৃতির সমস্ত খরচ নির্বাহ করেও যথেষ্ট আয় উদ্ব‌ৃত্ত থাকে। এটি স্বত্বাধিকারীর তহবিলে জমা হয়, এতে তারই পকেট ভরে। পত্রিকাখানির গৌরব ও কাটতি যে লেখকদের লেখার দরুন হয়, তাঁরা এর একটি কপর্দক পান না। আমার মনে হতে লাগল এটা ঠিক নয়। সম্পাদকের খাটনি আছে বটে, তার দরুন

১৫৭