পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

এর কুঁড়িও দুই-একটি আবিষ্কার করেছিলাম। মালীরা যেমন মুদিত পাপড়িগুলির এক একটি হাতে করে খুলে খুলে পূর্ণ প্রস্ফ‌ুটিত পদ্ম একটি লোকের সামনে ধরে, আমিও তেমনি এই প্রতিভা-পদ্মকুঁড়িগুলির পাপড়ি খুলে খুলে দিয়ে তাদের স্বর‍ূপট ফুটিয়ে ধরতুম। ভারতীতে তাই আমার সম্পাদন-ক্রিয়া কেবল mechanical ছিল না, শুধ, মেশিনের মত কাজ নয়, মানবীয় রসে ভরা ছিল আমার সম্পাদকীয় জীবন। অথচ আত্মীয় ছাড়া আর কোন লেখকের সঙ্গেই আমার চাক্ষুষ পরিচয় হত না। চিঠিতে পত্রেই দেখাশুনা। যাদের লেখা একেবারে অচল বুঝতুম তাদেরও লেখক-হৃদয়ের প্রতি একটা মায়াদয় রেখে সৌজন্যের ত্র‍‌ুটি না করে লেখা ফেরত দিতুম। তবু যা অপ্রিয় তা অপ্রিয়ই হত। লেখা ফেরত পাওয়ায় একজন আমায় ক্ষোভভরে লিখেছিলেন—"You are a past mistress in the art of denial.” এই রকম অনিচ্ছাকৃত আঘাতের প্রতিঘাত পরজীবনে যে পাইনি একেবারে তা বলতে পারিনে।

 আমার হাতের ভারতী শুধু, সুকুমার সহিত্যের রঙ্গভূমি ছিল না, বাহন হয়েছিল জাতীয়তার সে কথা আগেই বলেছি। আমার জাতীয়তা যখম জাতিকে আত্মমর্যাদার কণ্টকঘন সর্বাবস্থায় পথের কাঁটা তুলে তুলে চালাতে ব্যস্ত তখন স্বামী বিবেকানন্দের অভ্যুদয় হল। স্টার থিয়েটারে দেশবাসীর দ্বারা তাঁর অভিনন্দন ও তার উত্তরে তাঁর বক্ত‌ৃতা উপলক্ষ্য করে ভারতীতে আমার একটি লেখা বেরল। সেইটি পড়ে বিবেকানন্দ স্বামী আমায় একটি পত্র লিখলেন, সে পত্রের উত্তর দিলুম। ক্রমে ক্রমে দুটি একটি পত্রবিনিময় হতে হতে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ আলাপ-পরিচয়ের সচনা আরম্ভ হল। তাঁর দূতী হয়ে সিস্টার নিবেদিতা এলেন আমায় নিমন্ত্রণ করে বেলুড় মঠে নিয়ে যেতে। আমি আমার ঘরটির ভিতরে বসে বসেই সকল লক্ষ্যভেদে নিযুক্ত থাকতুম, বাইরে যেতুম না পারতপক্ষে আগে সে কথা বলেছি। আধুনিক মেয়েদের মত আমাদের বাইরে যাবার প্রবণতা ছিল না, তাতে সঙ্কুচিত বোধ করতুম—আজ পর্যন্ত এ যুগেও ট্রামে বাসে উঠে ঠেলাঠেলি করে কোথাও যাতায়াতের প্রবৃত্তি আমাদের নেই। সিস্টার নিবেদিতা আমায় নিমন্ত্রণ করে গেলে আমি কি করি কি করি ভেবে সুরেনকে ধরলুম আমায় সঙ্গে করে নিয়ে যেতে, একা একা যেতে কিছুতেই সাহসে কুলোল না। সুরেন গেল আমার সঙ্গে। প্রথমে ঘরের গাড়ি করে বাগবাজারে গিয়ে সেখানকার ঘাটে নিবেদিতার সঙ্গে মিলিত হয়ে নৌকা করে পাড়ি দেওয়া হল বেলুড়ে। গঙ্গার অব্যবহিত

১৬০