পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তেইশ

ভারতীতে বিদেশী লেখক ও হিন্দু-মুসলমান ঐক্যের সমস্যা

আজকাল ‘বিদেশী’ কথাটায় শুধু পাশ্চাত্যদেশ য়ুরোপ আমেরিকার লোক বোঝায়। সেকালে বাঙালীর পক্ষে ভারতের অন্যান্য প্রান্তের লোকও বিদেশী ছিল—অবাঙালীমাত্রে তখন বাঙালীর চোখে বিদেশী। অর্ধশতাব্দী ব্যাপক কংগ্রেসের কার্যপ্রভাবে ভারতবর্ষ আজ সত্যিই একটি মহাদেশ বলে গণ্য; এক প্রান্তের ভারতীয় আজ অন্য প্রান্তের ভারতীয়র ধারণায় স্বদেশী। পূর্বে কয়েক শতাব্দীতে বাঙলার এক জেলার লোকের সঙ্গেও আর এক জেলার লোকের বিষম ভেদজ্ঞান ছিল—তাইতে বরেন্দ্রভূমি ও রাঢ়ভূমিবাসীদের পরস্পরের প্রতি বিদেশীয়তা-বুদ্ধি প্রবল ছিল, তাইতে একই জেলাভুক্ত এক গ্রামের কায়স্থদের সঙ্গে অপর গ্রামের কায়স্থদের কন্যা-ব্যবহার হত না—“ভিন্‌-গাঁ” বলে অবহেয়তার ভাব আসত। সেই অনেকানেক ক্ষুদ্রানুক্ষুদ্র ভেদজ্ঞতা এখনো নিম্নস্তরে কিছু কিছু থাকলেও শিক্ষিত সমাজ থেকে অনেক পরিমাণে চলে গেছে। তাই বাঙলার বাইরের যে কোন ভারতীয় ব্যক্তিকে ‘বিদেশী’ বলে আখ্যাত করা এখনকার দিনে দোষাবহ হবে। কিন্তু আমি যেকালে ভারতী সম্পাদন করতুম, সেকালে এ দুর্ভেদ্য দুর্গ মাথা তুলে খাড়া ছিল। আমি তার মাথায় হাত বুলিয়ে কিছুটা নুইয়ে আনলুম। ভারতবর্ষের অন্যান্য প্রান্তের দু-একটি প্রসিদ্ধ পুরুষের সঙ্গে আমার আলাপ-পরিচয়ের সুযোগে তাঁদের অনুরোধ করে যে যে ক্ষেত্রে তাঁরা প্রতিষ্ঠাবান, সেই সেই ক্ষেত্রবিষয়ক এক একটি মৌলিক প্রবন্ধ আনালুম। বম্বে হাইকোর্টের জজ মহাদেব গোবিন্দ রাণাডের লেখনী হতে পেশোয়াদের আমলে ধর্মচ্যুত হিন্দুদের স্বধর্মে ফিরিয়ে তাদের অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ সম্বন্ধে একটি মৌলিক প্রবন্ধ যোগাড় করলুম। তিনি লিখেছিলেন ইংরেজীতে—ভারতীতে বেরল বাঙলায়—আমার হাতে অনুবাদিত হয়ে। আর একজন ‘বিদেশী’ও সেই সময় ভারতীয় লেখক-তালিকায় ধরা পড়লেন—নাম তাঁর মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। তখনও তিনি ‘মহাত্মা গান্ধী’ হননি, আফ্রিকায় কার্যকলাপের সূচনায় তাঁর নাম-যশ সবেমাত্র আরম্ভ হয়েছে। সেবার দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কলিকাতা কংগ্রেসে এসেছেন। আমাদের বাড়িতে একদিন একটি সায়াহ্ন পার্টিতে অন্যদের সঙ্গে এলেন। দেখতে

১৬৭