পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

শুনতে চটকদার মোটেই নয়—তবে গালভরা হাসিতে ভরা—মাথায় ‘পিরিলি পাগড়ী’ পরা। নানা প্রান্ত থেকে সমাগত অতিথিবহুল পার্টিতে অল্পক্ষণের জন্য মাত্র তাঁর সঙ্গে আমার সেদিন পরিচয় হল। পরে তিনি আমায় গল্প করেন, আমায় কি রকম সমীহের চক্ষে দেখলেন সেদিন,—কেননা আমার পিতা—যিনি কংগ্রেসের অক্লান্তকর্মী জেনারেল সেক্রেটারী তাঁর কন্যা আমি, আমার নিজস্ব কার্যকলাপের বিশেষ কোন পরিচয় পাননি। আমি তখন ভারতীর জন্যে মৃগয়াপরায়ণ, সিংহান্বেষী—সেই চোখেই মোহনদাস গান্ধীকে দেখেছিলুম। ইনি ভারতবাসীর হয়ে বিদেশে কাজ করায় নামকরা একটি সিংহ হয়েছেন, এঁর কাছ থেকে একটা লেখা আদায় করে ভারতীর কলেবর পুষ্ট করতে পারলে বেশ হয়—এই প্রয়োজন-বুদ্ধিতে মাত্র আমি তখন তাঁকে দেখেছিলুম।

 আর একজন আমায় ইংরেজিতে মৌলিক প্রবন্ধ লিখে দিয়েছিলেন। তাঁকে ঠিক ‘বিদেশী’ বলতে পারিনে, অথচ আমাদের পক্ষে ঠিক বিদেশীতুল্যই ছিলেন—হাইকোর্টের জজ হওয়া ব্যারিস্টার সৈয়দ আমীর আলি—যাঁর ইংরেজ পত্নীজাত পত্রও এখন দ্বিতীয় জাস্টিস আমীর আলি। তিনি তাঁর “Spirit of Islam”এর এক কপি আমায় উপহার দিয়েছিলেন। হিন্দু-মুসলমান ঐক্য সম্বন্ধে আমার পক্ষপাতিত্য তখন থেকেই প্রকট ছিল। একবার শ্রীশ সেন সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের “দেবালয়”-এর কোন অধিবেশনে আমায় একটি বক্তৃতা দিতে অনুরোধ করেন। আমি “হিন্দুমুসলমানের ঐক্য” সম্বন্ধে বলতে প্রস্তুত আছি বল্লুম—আর কোন বিষয়ে নয়। তাঁদের কমিটি তাতেই স্বীকৃত হলেন। হ্যারিসন রোডের ‘মিত্র ইনস্টিটিউটে’ বক্তৃতার স্থান নির্দিষ্ট হল। বলেছি, কোন সভায় নিজে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করা আমার বড় অস্বস্তিকর ঠেকত। সেবারও আমি নিজে গেলুম না, বক্তৃতা লিখে পাঠিয়ে দিলুম। শুনলুম, লোক ভেঙে পড়েছিল মিত্র ইনস্টিটিউটের হলে। কিন্তু আমি আসব না, শ্রীশবাবু আমার হয়ে বক্তৃতা পড়ে শোনাবেন জানতে পেরে ছেলের দল ক্ষেপে উঠেছিল—শ্রীশবাবুকে মারতেই বাকী রেখেছিল। হ্যাণ্ডবিলের দ্বারা আমি বক্তৃতা দেব ঘোষণা করায় মিথ্যাবাদী, প্রতারক প্রভৃতি বলে শ্রীশবাবুর প্রতি কোনরকম গালিবর্ষণের ত্রুটি করেনি তারা। পরের দিন শ্রীশবাবু এসে আমাকে হাতে-পায়ে ধরে অনুরোধ করলেন—আর একদিন মিটিং করতেই হবে এবং তাতে আমায় নিজে উপস্থিত হতেই হবে—নয়ত শ্রীশবাবুর মান থাকে না। আমি অগত্যা স্বীকার করলুম। এবার এলবার্ট হলে মিটিংয়ের

১৬৮