পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আয়োজন হল—জগদীশ বসু তার প্রেসিডেণ্ট, বিপিন পাল তাতে অন্যতম বক্তা। আমি গেলুম, নিজেই বক্তৃতা পড়ে শোনালুম। লোকে লোকারণ্য। মুসলমান শ্রোতাও অনেক।

 বক্তৃতার সারমর্ম এই ছিল যে, ভারতবর্ষে আবহমানকাল নবাগতের সঙ্গে পুরানো বাসিন্দাদের স্বার্থ নিয়ে ঝগড়া চলে এসেছে—আর্যঅনার্যর যুগ থেকেই। যখন সেই এককালীন ‘নব’রা পুরানো হয়ে যায়, বিদেশী আর থাকে না, দেশস্থ হয়ে যায়, দেশের পূর্বলোকদের সঙ্গে মিলে মিশে এক হয়, সমস্বার্থ হয়, তখন তাদের সন্তানেরা সবাই একই ভারতমাতার সন্তানস্বরূপ নবতর অভিযাত্রীর বিরুদ্ধে একজোট হয়ে দাঁড়ায়। যেমন ইংলণ্ডের আদিম বাসীরা ব্রিটনের অ্যাঙ্গলস ও স্যাক্সনেরা ক্রমাগত বিদেশী অভিপ্লবে প্লাবিত হয়ে হয়ে, পরাহত হয়ে হয়ে ক্রমে মিলেমিশে ঐক্যসাধন করে, আজ এক ইংলিশ বা ব্রিটিশ জাতিতে পরিণত হয়েছে। অতীতে যা যা ঘটেছিল, তা বিস্মৃতির গর্ভে ডুবিয়ে দিয়ে অতীতের দ্বন্দ্ববিবাদ অনৈক্য মিটিয়ে আজ দম্ভভরে ঐকজাত্য অভিমানে গান গাইছে—“Britons never shall be slaves.”

 আর্য অনার্য, হুন-শক ও আর্য, রাজপুত পাঠান এবং পাঠান ও মোগলের যে দ্বন্দ্বধারায় ভারতের ইতিহাস-কলেবর গঠিত তারও শিক্ষা এই। স্বার্থগত একতাবুদ্ধিই সকল ঐক্যের মূল, সেই স্বার্থের বিরুদ্ধে যারা দাঁড়ায় তারাই বাকী সকলের শত্রু হয়। একসময় ভারতবাসী অনার্যদের শত্রু ছিল অভারতীয় আর্যরা। সেই আর্যেরা যখন ভারতসন্তান হয়ে গেলেন তাঁদের শত্রু হল ভারতসীমার বাইরে থেকে আসা তাঁদেরই এককালীন জ্ঞাতিগোত্র হুন-শকেরা। তারাও ভারতীয় হয়ে গেলে তাদের রক্তে আর্যদের রক্ত মিলিত হলে, তারাও আপন হয়ে গেল, আর পর রইল না। তখন পর হল আরও পরন্তন আগন্তুকেরা—নূতন মহম্মদীয় ধর্মাবলম্বীরা। এইবার বিরোধের শিকড়টা অনেক গভীরে প্রবেশ করলে। সেমিটিক আরবের বর্বর মূর্তি-পূজকদের মূর্তি সম্বন্ধে পরিকল্পনার সঙ্গে অসূক্ষ্মদৃষ্টিতে ভারতীয় আর্য ঋষিদের মূর্তিপূজাতত্ত্ব একই পর্যায়ে ফেলা হল, দুই একই নজরে দৃষ্ট হল। মূর্তিমাত্রকে মারমার কাটকাট করতে করতে এবার বিদেশীরা এসে হাজির হল। এবার শুধু খাদ্যান্বেষীরা এল না, তাদের পিছনে এল ধর্মধ্বজীরা—নিজের ধর্ম প্রচারই যাদের জীবিকা। এখন থেকে শুধু স্বার্থে স্বার্থে দ্বন্দ্ব বাধালে না, দেশস্থ ভারতীয়দের আত্মাভিমানে বিষম ঘা দিলে বিদেশীয়েরা। সেই ঘা

১৬৯