পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 ডেপুটেশনের লীডাররা, মাতব্বর মৈমনসিংহবাসীরা কন্যার দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় আমার পিতা অপ্রতিভ হয়ে বলতে লাগলেন—“ও পাগলী, ওর কথা ধরবেন না।”

 হেমন্ত বসু গর্জাতে গর্জাতে ও অনাথ গুহ প্রমুখ বাকী সকলে মিষ্ট হাসি হেসে আমায় নমস্কার করতে করতে চলে গেলেন। কিন্তু ব্যারিস্টার হেমন্ত বসুরই জয় হল। তিনি তখনি তাঁর বন্ধু পুলিস সাহেবের কাছে গিয়ে একটা ‘Breach of the peace’-এর সম্ভাবনা হবে জানিয়ে পুলিসের হুকুম পাঠিয়ে অভিনয় বন্ধ করালেন এবং জয়গর্বে স্ফীত হলেন। অনাথবাবু কিন্তু সেই পর্যন্ত আমার প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধাসম্পন্ন ও আমার নানাকার্যে সাহায্যদাতা হলেন।

 এইখানে একটা কথা বলি। আমি যে বাড়িতে ছেলেদের ক্লাবখোলা, তাদের হাতে লাঠি-ছোরা ধরান, ধুমধামে বীরাষ্টমীর উৎসব করা প্রভৃতি নানা কারখানা চালাচ্ছিলুম, তাতে আমার বাবা-মা-রা কি বলতেন? কিছু না—কোন বাধাই দিতেন না। তাঁদের মৌন সম্মতিই আমার পশ্চাতে বল ছিল—না হলে এসব কাজে এক পা-ও অগ্রসর হতে পারতুম না।

চব্বিশ

সমাজ—পারিবারিক, বান্ধবিক ও সাধর্ম্যিক

তিলক মহারাজা

মানুষের জন্মগত সমাজ হয় পারিবারিক, বন্ধু বিস্তৃতির সঙ্গে সঙ্গে একটা বান্ধবিক সমাজ তাকে ঘেরে, এবং একই ধর্মসম্প্রদায়গত সমাজও তার আর একটি স্বতন্ত্র থাকে। ছেলেবেলায় আমাদের সমাজ ছিল যোড়াসাঁকোর পরিবারের মধ্যে আবদ্ধ। আমাদের মেলামেশা, খাওয়া-দাওয়া, উৎসব ও শোকে সম্মিলন ছিল শুধু আপনা-আপনির মধ্যে। কাশিয়াবাগানে এসে, থিয়সফি ও সখি-সমিতির দরুন বাইরের অনেক পরিবারের মেয়েদের সঙ্গে মায়ের বন্ধুতা হওয়ায় মেলামেশার সমাজটা বড় হতে লাগল কিন্তু সে মেলামেশাটা অনেকটা উপর উপর। হিন্দুসমাজের প্রকৃতিই হচ্ছে নিজেদের বৈবাহিক গণ্ডীর মধ্যে নিবন্ধ থাকা। যাদের সঙ্গে

১৭৪