পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সামান্য সৈনিক। আমি তাকে সর্বতোভাবে সাহায্য করতে লাগলুম। সেও আমার খুব অনুগত হল। বারীন ঘোষের নেতৃত্বে প্রকাশ্যে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে কলকাতার এক পাড়ায় ভারত-উদ্ধার দল স্থাপিত হল। যতীন বাঁড়ুয্যে তার একজন প্রধান কর্মকর্তা—সেখানেই খায়-দায়, থাকে, আর যারা দলে আসে তাদের কসরৎ ও ড্রিল করায় এবং ঘোড়ায়-চড়া শেখায়। ঘোড়ায় চড়তে জানাটা বরোদার একটা বিশেষত্ব। রাজপ্রাসাদের অঙ্গনে মহারাণী চিম্নাবাঈকে আমি দেখেছি, একজন শিখ সর্দারের সাহায্যে ঘোড়ার পিঠে চড়ে ঘোড়াকে কাবু করা অভ্যেস করতে। যতীন বাঁড়ুয্যে তাদের দলের ছেলেদের উপরে বর্ণিত যা কিছু শেখাত, তাতে আমার অনুমোদন ছিল। খালি আমার মতভেদ হল যখন শুনলুম, তাদের দল থেকে ডাকাতি চালানর হকুম বেরিয়েছে। এ বিষয়ে নাকি নিবেদিতার সঙ্গে তাদের দলের সম্পূর্ণ ঐকমত্য ছিল। নিবেদিতা বলতেন বটে, ব্রিটিশ শাসনে দেশ থেকে চোর-ডাকাতের ভয় লুপ্ত হয়ে দেশব্যাপী শান্তি বিস্তারটাই হল এদেশের পুরুষদের পৌরুষ ধংসের কারণ; কতকটা অশান্তি না থাকলে পৌরুষ জাগ্রত হয় না, সেইজন্যে ডাকাত থাকার দরকার। ওখানে যা কিছু পরামর্শাদি হত, যতীন বাঁড়ুয্যে আমাকে জানাত। একদিন বললে—“কাল ভোর রাত্রে একদল লোক ডায়মণ্ড হার্বারের কাছে একটা বুড়ির বাড়ি গিয়ে তাকে মেরে মাটির নীচে পোঁতা তার অগাধ ধন নিয়ে আসবে। বুড়ির কেউ নেই।”

 আমি শুনে বললুম—“অতি চমৎকার কথা! এক অসহায় বুড়িকে মেরে তার ধন নেবে তোমরা! বাহবা! কত পৌরুষ!—এ রক্ত-কলুষিত ধন নিয়ে করবে কি তোমরা?”

 “দেশের কাজ করব।”

 “দেশমাতা কি তোমাদের এই মলিন হাতের কাজ গ্রহণ করবেন? তাঁর একটি নিঃসহায় নিরপরাধিনী বৃদ্ধা সন্তানের হনন তাঁর সইবে?”

 “নিশ্চয়ই! তিলক মহারাজের এই আদেশ।”

 “আমি কিছুতেই তা বিশ্বাস করতে পারিনে—যতক্ষণ না তাঁর নিজের মুখে শুনি। আমি যাব তাঁর কাছে, তাঁকে জিজ্ঞেস করব। যতদিন না আমি ফিরি, ততদিন পর্যন্ত এ হত্যা তোমরা স্থগিত রাখবে—আমাকে কথা দাও।”

 “আচ্ছা তাই হবে।”

 আমি দুই-একদিনের মধ্যে পুণায় গিয়ে তিলকের সঙ্গে দেখা করার

১৭৯