পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তাঁদের হাতে মাকুর ফেরফারে এ জীবনে সে জীবনে নব নব প্যাটার্ন ফুটতেই আছে। প্রত্যেকটিতে স্বভাবগত ও ঘটনাগত সূক্ষ্ম ইতরবিশেষ ও বৈচিত্র্য দেখা দেবেই। অচেতন মেশিনের মুখ থেকে বেরন অবিকল একই রকমের রাশি রাশি বস্তুর মত প্রাণের সময় আদিশিল্পীর বুক থেকে বেরন জীবননামীয় শিল্পখণ্ডগুলির ভিতর একঘেঁয়েত্ব একেবারে নেই। বাইরে থেকেই দেখতে পাওয়া যায় মানুষের কররেখায়, পদরেখায়, আঙুলের ডগার অনন্ত বিভিন্নতায় জীবনসমূহের অন্তহীন বৈচিত্র্য চিহ্নিত হয়ে রয়েছে। কোন মানুষের সঙ্গে কোন আর একজন মানুষের অক্ষরে অক্ষরে, পদে পদে, সেণ্টেন্সে সেণ্টেন্সে বা সুচির ক্ষেপে ক্ষেপে মিল নেই। কেউ কারো অবিকল নকল নয়। এক জাতীয় বলে দেখতে অনেকটা এক হলেও প্রত্যেকেরই স্বাতন্ত্র্য আছে। যেখানে স্বাতন্ত্র্য বা অভিনবত্য খুব ডবডবে সেখানেই সকলের দৃষ্টি সহজে আকর্ষণ করে, নয়ত সাধারণ বলে দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। জীবনখানার বুনোনি আরম্ভ হয় মাতৃগর্ভে থাকতেই, শেষ হয় জীবনলীলাবসানে। আমার জীবনের প্যাটার্নখানা দিনের পর দিন, বছরের পর বছর নানা ফুলপাতা কেটে কেটে দেখা দিতে লাগল। সে আস্তরণখানি যাঁর চরণের আসন তিনিই তার বিরচক হয়ে চলবেন। তাঁর হাতের মাকু হঠাৎ বাঙলা দেশ থেকে ছুটে গেল দূরে সুদূরে—পঞ্চনদের কূলে, সেখান থেকে টানা-পোড়েনের খেলা চালাতে লাগলেন।

 আমি গিয়েছিলুম তখন হিমালয়ের উপর স্বামী বিবেকানন্দ প্রতিষ্ঠিত মায়াবতী আশ্রমে। সেখানে দেখলুম সেই ‘‘অক্ষর চুম্বিত ভাল হিমাচল” ভারতবর্ষকে আমার, সেই “শুভ্র তুষার কিরীটিনী” মাকে আমার। আহা কি সুন্দরী! চোখের সামনে ঝকঝক ঝকমক করছে কেদার ও বদ্রিনারায়ণের শৃঙ্গ। এই তুষার প্রাচীরের ওপারে অন্যান্য বর্ষ, অন্যান্য সভ্যতা; এপারে চিরসনাতন ভারতবর্ষ ও ভারত সভ্যতা, যা বেদমন্ত্রে মুখরিত হয়ে ভারতের গগন আচ্ছন্ন করেছিল, ঐ পর্বতমালার কন্দরে কন্দরে আজও কি তার প্রতিধ্বনি গুঞ্জরিত হচ্ছে না? ঐ উপত্যকাক্রোড়োত্থিত মেঘপুঞ্জ চিরঞ্জীব ঋষিদের হোমাগ্নিধূমে কি আজও ধূমায়িত নয়?

 আমি এখানে বিবেকানন্দের গুরু-ভ্রাতা স্বামী তুরীয়ানন্দের নিকট প্রতিদিন উপনিষদ অধ্যয়নে ব্যাপৃত হলুম। ভগবদ্গীতার সঙ্গে পরিচয়সাধনও এখানে আরম্ভ হল। রাত্রে কোন কোনদিন যাজ্ঞবল্ক্য ও

১৮২