যাঁরা সম্পূর্ণ সক্ষম হলেও বিনা পয়সায় খাওয়া-দাওয়াটাই পছন্দ করেছেন, আশ্রমের পরিচালনার্থে যৎকিঞ্চিৎ সাহায্য বলেও কিছু দিয়ে যান নি, ‘ফ্রি হোটেল’ ও স্যানেটোরিয়াম স্বরূপ এটাকে ব্যবহার করেছেন। আশ্রম এভাবে কতদিন অতিথি-সৎকার চালাতে পারে? সেইজন্যে তাঁরা আজকাল পানাহারের জন্য আগন্তুকদের কাছ থেকে একটা খরচ নেওয়া তাঁদের নিয়মাবলীর অঙ্গ করেছেন। সাধুসন্ন্যাসীরাই আশ্রমের যথার্থ অতিথি—যাঁরা “ন তিধি দ্বিতীয়া” অতিবাহিত করেন। কিন্তু যে গৃহস্থেরা পয়সা দেন ও দুচার মাসের জন্য থাকেন তাঁদের প্রতিও আশ্রমাধ্যক্ষদের সৌজন্যের কোন ত্রুটি হয় না।
দুটি পাহাড়ের উপর দুটি বাংলো, উপরটিতে সাধুদের নিবাস, নীচে থাকেন কর্নেল ও মিসেস সেভিয়ার। কর্নেল সেভিয়ার সম্প্রতি দেহরক্ষা করেছেন, আশ্রমের সকলের মাতৃস্বরূপিণী বৃদ্ধা মিসেস সেভিয়ার এখন একাকীই আছেন। তাঁরই টাকায় এ আশ্রম প্রতিষ্ঠিত ও এর খরচ নির্বাহিত হয়।
একজন আমেরিকান সাধু ও একজন আমেরিকান ব্রহ্মচারী উপরের আশ্রমে সন্ন্যাসীদের সঙ্গেই থাকেন। সাধুটি কেবল আধ্যাত্মিক পথের পথিক। ব্রহ্মচারীটির রাজসিক প্রকৃতি তাঁকে কর্মবহুলতার সিঁড়ি দিয়েই আধ্যাত্মস্তরে ক্রমে ক্রমে উন্নীত করছে। আমি থাকতে একজন আমেরিকান শিষ্যা এলেন সন্ন্যাস বেশধারিণী। তাঁর একমাত্র পুত্রস্নেহে তিনি পাগল ছিলেন। পুত্রের কুব্যবহারে তিনি মর্মাহত হয়ে পড়েন। সেই সময় বিবেকানন্দ স্বামী গিয়ে একদিন তাঁকে ‘মা’ বলে সম্ভাষণ করায় তাঁর প্রাণের ভিতর থেকে সাড়া উঠল—স্বামীজীকে ও তাঁর উপদেশকে তিনি আঁকড়ে ধরলেন। এতদিন পরে ভারতবর্ষে এসে তিনি পূর্ণ শান্তি পেলেন।
পাহাড়ের শ্যামল বনানীতে সন্ন্যাসীদের গেরুয়া বস্ত্রের রঙ মিলিত হয়ে একটি অপূর্ব সৌন্দর্য বিকশিত করত। কোন চিত্রকর সেখানে থাকলে তার রসভোগের শেষ থাকত না।
সেই সময় একটি মারাট্টী যুবক সেখানে এসেছিল, সে হঠযোগপন্থী। হঠযোগের নানারকম মুদ্রা আমাদের দেখিয়েছিল। কিন্তু আমায় বিশেষ লাভবান করেছিল কতকগুলি বিশিষ্ট মারাহাট্টী গান শিখিয়ে। ‘মায়াবতী’র ভিতর দিয়ে পথ-চল্তি সন্ন্যাসী পথিকদের কাছে মীরাবাঈয়ের গানও আমার এখানেই প্রথম শোনা ও সংগ্রহ করা হয়। আর