পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/২০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

জীবনযাত্রা নির্বাহ করতে লাগলেন। তাঁর বড় ভাই মোহনলালেরও কিছুদিন পরে এক ব্রাহ্ম পরিবারের কন্যার সঙ্গে তৃতীয়বার বিবাহ হলে তিনিও পুত্রলাভ করলেন। জীবনে এই প্রথম হিন্দুর বহুপত্নীকতার সঙ্গে সাক্ষাৎ সংস্পর্শ হল। একজন মাত্র দ্বিপত্নীক হিন্দুকে দেখেছিলুম ইতিপূর্বে সাতারায়, তিনি সাব-জজ সুগায়ক সোহনি সাহেব। তাঁর স্ত্রীদ্বয়ের দর্শনলাভ করিনি কিন্তু, তাঁরা আড়ালেই থাকতেন। শুনেছিলুম দুজনের বনে না। সোহনি সাহেব পুত্রার্থে দ্বিতীয় দারগ্রহণ করলেও পুত্রমুখ-দর্শনে বঞ্চিত রইলেন। হিন্দুসমাজে বহু-বিবাহ আইনসঙ্গত হলেও কার্যতঃ শিক্ষিত লোকদের একপত্নীক হওয়াই নিয়ম, একাধিক পত্নী গ্রহণ সেই নিয়মের ব্যতিক্রম, বিশিষ্ট কতকগুলি কারণে ছাড়া তা হয় না। কারণগুলির মধ্যে প্রধান কারণ অপুত্রকতা। আর এক পরিবারের মা-বাপের কাছ থেকে শিশু ছিনিয়ে এনে দত্তক করার চেয়ে অনেকে পছন্দ করেন শিশুর মা নিজেরই পত্নীপদবাচ্যা হোক—যখন আইনে তার পথ খোলা আছে। হিন্দু-গৃহে সন্তানহীনা প্রথমা পত্নী অনেক সময় নিজেই স্বামীর ভবিষ্যৎ সন্তানের মাতাকে নিজে পছন্দ করে ঘরে তোলেন, স্বামি-প্রেমের ভাগীদার করেন। এই হল রক্ত-পরাম্পরাগত হিন্দু-সভ্যতা, হিন্দু নারীর কৃষ্টি, স্ত্রীর নিজের ব্যক্তিত্বকে স্বামীর বংশরক্ষা প্রয়োজনের সঙ্গে একীভূত করা। এই সহজ আত্মবিলীনতার ভিতর কত আত্মসম্মান আছে—এ হল স্বামীর অপর স্ত্রী আসক্তির ফণিনী দংশন থেকে আত্মবিলোপ মন্ত্রবলে আত্মরক্ষা। সকলে পারে না, কিন্তু যদি কেউ পারে, তবে কি সেটা দোষের? একটা সমগ্র জাতি যদি পারে তবে সে জাতি কি নিন্দনীয়? হিন্দুর সামাজিক নতুন আইন যে বিধিবদ্ধ হতে চলেছে, তাতে অনেকগুলি আবশ্যকীয় কু-রীতির সংস্কারের সঙ্গে সঙ্গে অনেকগুলি সু-রীতিরও অনাবশ্যকীয় কর্তন হতে চলেছে—একটা সাজান ফলফুলের বাগান যখন অযত্নে আগাছায় ভরে যায়, সেগুলো উপড়োতে গিয়ে যেমন ভাল ভাল দামী গাছও জড়সুদ্ধ ছাঁটা হয়ে যায়। বিবাহিত জীবনে বৈধ একপত্নীকতার নিয়মটি দেখতে অতি ভদ্রলোকের মত, কিন্তু তার আড়ালে অবৈধ বহুপত্নীকতা পাশ্চাত্য সমাজে কুৎসিতরূপে বিরাজমান। প্রাচ্যে বৈধ ভাবে পরিণীতা একাধিক স্ত্রী গৃহে সম্মাননীয়া—এমন কি রাজওয়াড়ার সপ্তপদের স্থলে ত্রিপদের ফেরে পরিণীতা সখীরাও স্বামিগৃহে ভরণপোষণের অধিকারী। পাশ্চাত্যের অবৈধভাবে উপভোগ্যা স্ত্রী সম্মানহীনা এবং তার নিজের ও সন্তানদের ভরণপোষণ নির্ভর করে

১৮৯