প্রায়শ্চিত্ত না করলে এ শাস্তির অপনোদন হবে না—আপনার কর্ণপীড়া সারবে না।”
“কি প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে?‘‘
“সেই দত্ত-বংশের কোন সন্তান যদি আজও জীবিত থাকে খুঁজে বের করুন। তারই থুঁতুতে আপনার কানের ঘা সারবে, আর ওষুধ নেই।”
চারিদিকে খোঁজ খোঁজ পড়ে গেল। নবাবের চরেরা সন্ধান পেলে যুদ্ধকালে একটি গর্ভিণী দত্তকুলবধূ, তাঁর পিত্রালয় শেয়ালকোটে ছিল। দত্তকুল নির্মূল হলে সেখানে তার দুটি যমজ পুত্র ভূমিষ্ঠ হয়। মাতুল ভাগিনেয় দুটিকে অতি সঙ্গোপনে রক্ষা করছিলেন। নবাবের গুপ্তচর এসে তাদের লাহোরে ধরে নিয়ে গেল। সেখানে নবাবের শয়নকক্ষে নবাবের কাছে সমুপস্থিত করে হাকিম আদেশ দিলেন—“নবাব বাহাদুরের কানে থুঁতু ফেল।” শিশু, দুইটি ভয়ে আড়ষ্ট। অনেক পীড়াপীড়ি, অনুনয়বিনয়, ভয় দেখানর পর তারা অগত্যা তাই করলে। কিছুদিন পরে নবাব নীরোগ হয়ে উঠলেন। তখন দুই ছেলেকে দুই ঘোড়ার পিঠে চড়িয়ে নবাব স্বয়ং আদেশ দিলেন—“ঘোড়া ছুটিয়ে দুজনে দুদিকে বেরও। চব্বিশ ঘণ্টা ধরে ঘুরে প্রতি ঘোড়া যতটা ভূখণ্ড পরিভ্রমণ করবে ততটার নিষ্কর মালিক হবে তার আরোহী।”
এক ঘোড়া শিয়ালকোট জিলার ডাফরওয়ালের দিকে গেল, আর এক ঘোড়া গুরুদাসপুর জিলার কঞ্জরূরের দিকে। এই দুই ভূখণ্ডে দুই দত্তবংশ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হল।
কঞ্জরূরে অবস্থিতির পরও অনেকানেক যুদ্ধে দত্তরা নিযুক্ত হয়েছেন, শান্তিময় জীবন অতিবাহিত করেননি। যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত হওয়াটা তাঁদের পক্ষে সাধারণ কথা—যেমন সচরাচর লোকের পক্ষে রোগাক্রান্ত হয়ে বিছানায় মৃত হওয়া। কিন্তু ‘শহীদ’—martyr—উপাধি সেই পায় যে অসাধারণ বীরত্ব দেখাতে দেখাতে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণদান করে। এ কালের Victoria Cross-এর বীরত্ব তার সঙ্গে কতকটা তুলনীয়। কঞ্জরূরী দত্তদের এক পূর্বপুরুষ আততায়ীদের বিরুদ্ধে লড়তে লড়তে ‘শহীদ’ বা martyr হয়েছিলেন। তাঁর নাম বাবা অটল খাঁ। কঞ্জরূরে তাঁর সমাধি অবস্থিত, একটা মাটির ঢিবি, অনতিউচ্চ মাটির দেওয়ালে ঘেরা। সন্ধ্যা হলে আশপাশের গ্রাম থেকে হিন্দু-মুসলমান উভয় শ্রেণীর স্ত্রী-পুরুষেরা আসে সমাধির উপরে। নিজের নিজের দীপ জ্বালায়। দত্তদের সামাজিক প্রথা এই যে, মুণ্ডন, উপনয়ন, বিবাহাদি ক্রিয়াকর্মে কর্মকর্তা ও কর্ম-