পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/২১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

অনুসরণ করে চলতে অনুনয় করেছিলেন, ব্রাহ্মসমাজী হলেই সব স্বদেশী আচার ও কুলাচার বর্জন যে অত্যাবশ্যক নয় তা আমার ব্যবহারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বোঝান হয়েছিল। প্রায় মণখানেক মোহনভোগ সঙ্গে নিয়ে পরের দিন 'বাবা ঠক্কর মহলে' অর্থাৎ বাবাঠাকুরের —বাবা অটল খাঁর—সমাধি অভিমুখে সকলে মিলে যাত্রা করলেন। সেখানে কয়েকবার সমাধি প্রদক্ষিণ করে, প্রণাম করে, দীপদান করে প্রসাদ নিবেদন করা হল। সেই প্রসাদ গ্রামসুদ্ধ সকলের ঘরে ঘরে একটু করে বিতরণ করা হবে।

 মাটির প্রাচীরটি প্রতি বছর বর্ষাকালে ধুয়ে ভেঙ্গে যায়। সেটি ইটের পাকা গাঁথুনি করে দেবার জন্যে সমাধিরক্ষক আমায় অনুরোধ জানালেন। আমি তাতে স্বীকৃত হয়ে যত খরচ হবে তার একটা এস্টিমেট আমায় পাঠাতে বললুম এবং কার্যারম্ভের জন্যে অগ্রিম দুই শত টাকা তার হাতে দিয়ে এলাম। চার-পাঁচদিন কঞ্জরূপে থেকে, শ্বশুরবাড়ির সম্পর্কিত নিকট ও দূরের প্রত্যেক আত্মীয় ও আত্মীয়ার সঙ্গে পরিচিত হয়ে তাঁদের আশীর্বাদ নিয়ে লাহোর ফিরলুম।

 বলেছি পঞ্জাবের এক এক জাতি এক একটি 'clan' এর মত। তাঁদের পিতৃ-পিতামহাগত কুলপ্রথা, আচ্যর ও সামাজিক বন্ধনে এক একটি বিশেষত্ব আছে। সে বিশেষত্ব আজ পর্যন্ত রক্ষিত হয়ে চলেছে। তাঁদের সামাজিক মিলনে ধনিদরিদ্রের ভেদ নেই। একজন হাইকোর্টের জজ ও ডাকপিয়নও সমান আসন লাভ করে সামাজিক মেলামেশায়। ছেলেমেয়ের বিবাহ উপলক্ষে খরচের নিয়ম বাঁধা আছে—বড়মানুষ বলে মেয়ের বিবাহে এতটা কিছু যৌতুক দিতে পারবে না বা ধূমধাম করতে পারবে না, যা একজন গরীবও নিজের মেয়ের বেলায় না পারবে। সব বাঁধাদস্তুর আছে—এতগুলো রেশমী জোড়, এতগুলো সূতির, বরযাত্রীদের এই এই খাওয়ান ইত্যাদি। বরেদের তরফ থেকে মেয়ের বাপের কাছে বরপণ চাওয়ার নিয়ম নেই, তাতে যেন মেয়েকে বিক্রয় করা হয় —অতি ঘৃণ্য কাজ।

 বংশের কীর্তিগায়ক একটি জাতি আছে—তাদের বলে 'মিরাসি'— স্কচ 'Pipers'দের মতো। ভাট নয় তারা, ভাটও আছে, কিন্তু তারা ব্রাহ্মণ আর মিরাসিরা এককালে হিন্দ, হলেও মুসলমান প্রভাবে মুসলমান-ধমী হয়ে গেছে। বিবাহাদি সংস্কারে মিরাসিদের পাওনা একটা বড় পাওনা—সেইটে প্রত্যেক ক্রিয়াকর্মের অঙ্গীভূত প্রধান খরচ।

১৯৩

১৩