পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/২১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সরকার চটিয়া আগুন। লাহোরের চীফ কোর্ট আদেশ দিলেন যে, পত্রিকার সম্পাদক এবং স্বত্বাধিকারী হিসাবে রামভজের নাম প্রকাশিত হইলে তাঁহার ব্যবহারাজীবের ‘লাইসেন্স’ বা অনুমতিপত্র বাতিল করিয়া দেওয়া হইবে। কিন্তু সহধর্মিণী সরলা দেবী এই সময়ে আসিয়া স্বামীর সম্মুখে দাঁড়াইলেন। পণ্ডিত রামভজের পরিবর্তে তাঁহারই নাম প্রকাশিত হইল হিন্দুস্থানের সম্পাদক ও স্বত্বাধিকারী রূপে। সরকারী অপচেষ্টা এইভাবে ব্যাহত হইল। সরলা দেবী প্রকাশ্যে পত্রিকার ভার লইয়া ইহার একটি ইংরেজী সংস্করণও বাহির করিলেন। বলা বাহুল্য, সরলা দেবী ইংরেজী রচনায় সুপটু ছিলেন। প্রাক্‌-বিবাহ যুগে ‘ভারতী’ সম্পাদনাকালে তিনি ‘হিন্দুস্থান রিভিয়ু’র মাধ্যমে কংগ্রেসী রাজনীতি এবং হিন্দু-মুসলমানের সম্পর্ক বিষয়ক প্রবন্ধ লিখিয়া লালা লাজপৎ রায় প্রমুখ নেতৃবৃন্দের নিকট হইতেও প্রশংসালাভ করিয়াছিলেন। এ কথা হয়ত অনেকে জানেন না যে, মহাবোধি সোসাইটির জর্ন্যালের দুই সংখ্যায় সরলা দেবী রচিত স্ত্রীশিক্ষাবিষয়ক একটি পরিকল্পনা প্রকাশিত হয়। ইহা বিদগ্ধজনের এত সমর্থন লাভ করে যে, তিনি ইহা পরিবর্তিত করিয়া পুস্তিকাকারে ছাপাইয়াছিলেন ১৯০১ সনে। রাজনৈতিক মতবাদ প্রকাশে তাঁহার মৌলিকতা ও রচনাশৈলী ছিল অপূর্ব। বিলাতের বিখ্যাত উদারনৈতিক পত্রিকা ‘ম্যাঞ্চেস্টার গার্ডিয়ান’ হিন্দুস্থানের (ইংরেজী সংস্করণ) বিশেষ প্রশংসা করিতেন। ‘হিন্দুস্থানে’ প্রকাশিত কোন কোন রচনা র‍্যামজে ম্যাকডোনালড তাঁহার ‘Awakening of India’ পুস্তকে উদ্ধৃত করিয়াছেন।

 পঞ্জাবের শিক্ষা-সংস্কৃতি ও সামাজিক জীবন: ভারত স্ত্রী-মহামণ্ডলের আদিকল্পক এবং অধিনায়ক ছিলেন সরলা দেবী। লাহোরের বিভিন্ন পল্লীতে নারীদের শিক্ষার ব্যবস্থা তিনি করিয়াছিলেন। অন্ততঃ পঞ্চাশটি স্থলে এইরূপ আয়োজন করেন বলিয়া প্রকাশ। লাহোরের নারীসমাজে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের প্রবর্তনে তিনি অগ্রণী হন। বাংলা সঙ্গীতের হিন্দী ও পঞ্জাবী অনুবাদ করাইয়া তাহাতে সুর সংযোগ করেন তিনি। পর্দানশীন নারীদেরও সমাজসেবায় তিনি উদ্বুদ্ধ করিতে থাকেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ও উৎসবে পুরুষের মত নারীরাও যাহাতে যোগদান করিতে পারেন তাহার ব্যবস্থা ও আয়োজন করিতেন। লাহোরে সরলা দেবীর কার্যকলাপ পঞ্জাবের অন্যান্য মফস্বল শহরেও অনুসৃত হয়। এইসব অঞ্চলের মহিলারা আত্মোন্নতির জন্য উদ্‌গ্রীব হইয়া উঠেন।

১৯৮