পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/২১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 আর্য সমাজীদের একটি প্রধান কার্য—অনুন্নতদের মধ্যে শিক্ষাবিস্তার দ্বারা তাহাদের উন্নতিসাধনের প্রচেষ্টা। পণ্ডিত রামভজ এই কার্যটির ভার নিজে লইয়াছিলেন। সরলা দেবী নারীজাতির মধ্যে শিক্ষাবিস্তারে যেমন একদিকে লিপ্ত ছিলেন অন্যদিকে স্বামীর অনুন্নত জাতিদের উন্নতিপ্রচেষ্টারও বিশেষ সহায় হইলেন। সরলা দেবীর প্রগতিমূলক কার্যসমূহের দ্বারা বিশেষভাবে লাহোরে এবং সাধারণভাবে পঞ্জাবে এক নতন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি এখনও অনেকের স্মৃতিপথে জাগরূক রহিয়াছে।

 প্রথম মহাসমর ও বাঙালী সেনাদল: সৈন্য বিভাগে প্রবেশে বাঙালীদের পক্ষে লিখিত ও অলিখিত বহু বাধানিষেধ ছিল। প্রাক্‌বিবাহ যুগে সরলা দেবী ‘ভারতী’র মাধ্যমে এই বাধা বিদূরণের নিমিত্ত লেখনী পরিচালনা করেন। আবার, বঙ্গসন্তানদের শারীরিক শক্তি ও মানসিক বল উদ্বোধনের জন্য সভা-সমিতি এবং অনুষ্ঠান-উৎসবের আয়োজনে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন। প্রথম মহাসমরের ঘোর সঙ্কট সময়ে, ১৯১৭ সনে, বাঙালী সন্তানদের সৈন্যবিভাগে প্রবেশের বাধা তিরোহিত হয়। তখন তাহারা দলে দলে যাহাতে সৈন্যদলে ভর্তি হয় সেজন্য স্বদেশীয় নেতারা আন্দোলন উপস্থিত করেন। তাঁহারা নানা স্থানে সাধারণ সভার আয়োজন করিয়া যুবকগণকে সৈন্যবিভাগে প্রবেশ করিতে আবেগপূর্ণ ভাষায় উপদেশ দিতেন। আমাদের কৈশোরেও এই উপদেশ শুনিবার সুযোগ ঘটিয়াছিল।

 সরলা দেবী ১৯১৭ সনে লাহোর হইতে বাংলা দেশে আসিলেন এবং এখানে কিছুকাল থাকি তাঁহার প্রচারিত পূর্বাদর্শ-মত বাঙালী যুবকদের সৈন্যদলে ভর্তি হইতে আবেদন জানাইলেন। তিনি কলিকাতা হইতে হুগলি, চুঁচুড়া, চন্দননগর, উত্তরপাড়া প্রভৃতি স্থানে উক্ত উদ্দেশ্যে গমন করেন। তিনি এই সময় প্রকাশ্য সভায় বক্তৃতা করিয়াই ক্ষান্ত হন নাই, যুদ্ধকার্যে উদ্বুদ্ধ করিবার জন্য তিনি সঙ্গীতাদিও রচনা করেন। ইহাতে তৎকর্তৃক সুর সংযোজিত হইয়া এই-সকল সাধারণ সভায় গীতও হইতে লাগিল। তাঁহার ‘যুদ্ধসঙ্গীত’ ১৩২৪ সনের ফাল্গুন সংখ্যা ‘ভারতী’তে প্রকাশিত হয়। উক্ত সভাগুলিতে প্রদত্ত বক্তৃতাসমূহের সারাংশও এই সময়কার ‘ভারতী’তে স্থান পাইয়াছিল। ‘আহ্বান’ (চৈত্র ১৩২৪), ‘উদ্বোধন’ (বৈশাখ ১৩২৫), ‘অগ্নিপরীক্ষা’ (জ্যৈষ্ঠ ১৩২৫) প্রভৃতি রচনাগুলি এখানে উল্লেখযোগ্য। সরলা দেবী নিতান্ত কর্তব্য-

১৯৯