পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/২১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

করেন নাই। পুরুষের মত নারীরও বানপ্রস্থ অবলম্বনে বাধা নাই— তাঁহারা এইরপ অভিমত প্রকাশ করিলেন। পণ্ডিত রামভজও ইহাতে বাদ সাধেন নাই। তাঁহার নিকট হইতেও সম্মতি পাইয়া সরলা দেবী সুস্থ চিত্তে হিমালয়ে হৃষিকেশে অবস্থান করিতে লাগিলেন।

 কিন্তু তাঁহার এবারকার হিমালয়-জীবন দীর্ঘায়ত হইল না। কারণ পণ্ডিত রামভজ দত্তচৌধুরী হঠাৎ অসুস্থ হইয়া পড়িলেন। সেবাপরায়ণা সরলা আর স্থির থাকিতে পারিলেন না। অসুস্থতার সংবাদে তিনি স্বামীর নিকট ছুটিলেন। চিকিৎসা, সেবা-শুশ্রষার সুব্যবস্থা সত্ত্বেও পণ্ডিত রামভজ ১৯২৩ সনের ৬ই আগস্ট মুশৌরীতে মারা গেলেন। সরলা দেবীর পক্ষে হিমালয়ে ফিরিয়া যাওয়া আর সম্ভব হইল না। পুত্র দীপক ১৯১৮-১৯ সনে বোলপুর-শান্তিনিকেতনে অধ্যয়ন করেন। মার্শাল ল’র পরে তিনি লাহোরে ফিরিয়া গেলেন। মহাত্মা গান্ধী তাঁহাকে অতঃপর সঙ্গে করিয়া সবরমতী আশ্রমে যথোপযুক্ত শিক্ষাদানের জন্য লইয়া গেলেন। কলিকাতা পুনরায় সরলা দেবী চৌধুরাণীর কর্মস্থল হইল। এখানেই তিনি আমত্যু বাস করেন।

 ভারত-সম্পাদনা—সাহিত্যক—সাংস্কৃতিক সভা-সমিতি: পঞ্জাব- বাসকালে নানা রকমের কর্মপ্রচেষ্টার মধ্যেও সরলা দেবীর বাংলা সাহিত্যচর্চা যে অব্যাহত ছিল তাহার উল্লেখ ইতিপূর্বে করিয়াছি। তিনি কলিকাতায় প্রত্যাবৃত্ত হইয়া পুনরায় সাহিত্যসেবায় মনঃসংযোগ করিলেন। 'ভারতী'র সম্পাদনা-ভার স্বতঃই তাঁহার উপর পড়িল। তিনি ১৩৩১ সালের বৈশাখ মাস হইতে ‘ভারতী’-সম্পাদনা শুর করিলেন। তিনি আড়াই বৎসর পর্যন্ত একাদিক্রমে ‘ভারতী'-সম্পাদনায় লিপ্ত ছিলেন। এই সময়ে তাঁহার সাহিত্যচর্চা পুনরায় পূর্ণোদ্যমে আরম্ভ হইল। গল্প, উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধ সর্ববিধ রচনায়ই তিনি হস্তক্ষেপ করিলেন। এ সময়ে তাঁহার বড়মামা দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং দিদি হিরন্ময়ী দেবী পরলোকগমন করেন। তাঁহাদের উপরে লিখিত সরলা দেবীর প্রবন্ধ দুইটিতে অনেক নূতন কথা জানা যাইতেছে।

 তাঁহার কৃতি শুধু ‘ভারতী'র পৃষ্ঠায়ই নিবদ্ধ রহিল না। তিনি এই সময় কলিকাতা ও বিভিন্ন অঞ্চলে সাহিত্য-সংস্কৃতিমূলক সভা- সমিতিতে আহুত হইতে লাগিলেন। তাঁহার ভাষণসমূহ ‘ভারতী'তে যথাসময়ে প্রকাশিত হয়। বিভিন্ন বিষয়ে তাঁহার ভাবধারণা এই-সকল পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ায় আমাদের পক্ষে জানিয়া লওয়া আজও সম্ভব।

২০২