পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/২২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

এই প্রসঙ্গে তাঁহার শ্রমিক প্রবন্ধটি (ফাল্গুন ১৩৩২) এখনও শ্রমিক আন্দোলনের দিগদর্শন হইয়া আছে। প্রেস-কর্মচারীদের সভায় সভানেত্রীরূপে তিনি যে ভাষণ দেন, তাহাই ‘শ্রমিক’ নামে ভারতীতে প্রকাশিত হয়। ১৩৩২ সালের ২০-২১ চৈত্র বীরভূম-সিউড়ীতে বঙ্গীয় সাহিত্য-সম্মেলনের সপ্তদশ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হইল। এই অধিবেশনে সাহিত্য-শাখার সভাপতিরূপে সরলা দেবী একটি সুচিন্তিত ভাষণ প্রদান করেন। এই অভিভাষণে বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন দিক, সমস্যা ও সুকৃতির কথা অতি প্রাঞ্জল ভাষায় বিবৃত হইয়াছে। ইহা ‘ভাষার ডোর’ শীর্ষে ১৩৩৩, বৈশাখ সংখ্যা ‘ভারতী’তে প্রকাশিত হয়।

 ভারত মহামণ্ডল—ভারত শ্রী-শিক্ষাসদন: সরলা দেবী কলি- কাতা ফিরিয়া ভারত স্ত্রী-মহামণ্ডলকে পুনরায় সক্রিয় করিতে প্রয়াসী হইলেন। কবি প্রিয়ম্বদা দেবীর হস্তে মহামণ্ডলের কার্য পরিচালনার ভার অর্পিত ছিল। তিনি ‘ভারতী’তে (বৈশাখ ১৩৩২) ভারত স্বী- মহামণ্ডলের উদ্দেশ্য ও নিয়মাবলী পুনঃপ্রচার করিলেন। অন্তঃপুরে স্ত্রীশিক্ষা প্রসারকল্পে মহামণ্ডলের কৃতিত্বের কথা পর্বে কতকটা বলা হইয়াছে। কয়েক বৎসরের মধ্যে শুধু কলিকাতায় পাঁচ শত গৃহে অন্ততঃ তিন হাজার অন্তঃপুরস্থ মহিলাকে শিক্ষাদানে এই মণ্ডল সমর্থ হন। বাংলা দেশে, বিশেষতঃ কলিকাতায়, পর্দাপ্রথা দ্রুত উঠিয়া যাইতে থাকে। বালিকা বিদ্যালয় স্থাপিত হইল, ছাত্রীরাও দলে দলে স্কুলে ভর্তি হইতে লাগিল। ভারত স্বী-মহামণ্ডলের কার্য ‍নূতনভাবে পরিচালিত করা আবশ্যক বোধ হয়।

 মহামণ্ডল পূর্ব পদ্ধতি পরিত্যাগ করিয়া সাধারণ এবং চারু-শিক্ষা- দানের নিমিত্ত একটি প্রকাশ্য শিক্ষাসদন প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হইলেন। ইহার উদ্যোগে ১৯৩০ সনের ১লা জুন ভবানীপুরে এই শিক্ষাসদন প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে উপযুক্ত শিক্ষয়িত্রীর অধীনে প্রবেশিকা পরীক্ষার মান পর্যন্ত ছাত্রীগণকে পড়াইবার ব্যবস্থা করা হইল। সরলা দেবী ছাত্রীগণকে গীতার মর্ম বুঝাইয়া দিতেন। মহামণ্ডল শিক্ষাসদনের অন্তর্গত একটি শিশু-সংরক্ষণকেন্দ্র খুলেন। মহামণ্ডলের গাড়ি এইসব শিশুকে বাড়ি হইতে আনয়ন এবং ফেরত পাঠানোয় ব্যবহৃত হইত। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার দুই মাসের মধ্যেই ইহার সুনাম ছড়াইয়া পড়িল। শিক্ষয়িত্রীগণ অনেকে প্রীশিক্ষাসদন হইতে স্বতন্ত্র হইয়া নারীশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গঠন করিলেন। ভারত স্ত্রী-মহামণ্ডল অতঃপর নিজ শিক্ষা-

২০৩