পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/২২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গ্রন্থোক্ত ব্যক্তি ও বিষয়ের সংক্ষিপ্ত পরিচয়

[সরলা দেবীর ‘জীবনের ঝরাপাতা’ প্রায় চল্লিশ বৎসরব্যাপী ভারতের জাতীয় ইতিহাসের আকর-গ্রন্থ হিসাবে গণ্য হইবার যোগ্য। ইহাতে বহু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উল্লেখ রহিয়াছে। প্রসিদ্ধ ও বহুজনবিদিত বিষয়গুলি সম্বন্ধে এখানে বিবৃত করিতে বিরত রহিলাম। আবার অনাবশ্যক-বোধেও কোন কোন বিষয় বলা হইল না। সকল বিষয়ে বলিতে গেলে পরিশিষ্ট অংশই একখানি বিরাট গ্রন্থ হইয়া দাঁড়ায়। সরলা দেবীর জন্ম: ৯ সেপ্টেম্বর, ১৮৭২।]

॥ এক ॥

 সৌদামিনী দেবী (১৮৪৭—১৯২০): মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের জ্যেষ্ঠা কন্যা। জোড়াসাঁকো ঠাকুর পরিবারে স্ত্রীশিক্ষার রেওয়াজ ছিল। গোঁসাই মেয়েরা পরিবারের স্ত্রীকন্যাদের প্রাথমিক লেখাপড়া শিখাইতেন। ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন ১৮৪৯, ৭ই মে, কলিকাতা বালিকা বিদ্যালয় (পরে ‘বেথুন স্কুল’) স্থাপন করেন। তখন প্রকাশ্য বিদ্যালয়ে বালিকাদের প্রেরণের রীতি উচ্চ ও মধ্য-স্তরের হিন্দু পরিবারে প্রচলিত ছিল না। বেথুন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর হইতে প্রকাশ্য বিদ্যালয়ে মেয়েদের পড়াইবার রীতি সমাজে চালু হয়। ১৮৫১ সনের মাঝামাঝি দেবেন্দ্রনাথ জ্যেষ্ঠা কন্যা পঞ্চম বর্ষীয়া সৌদামিনীকে এই স্কুলে ভর্তি করিয়া দেন। এই ঘটনাটির কথা তখন সাময়িক পত্রের সংবাদ-স্তম্ভেও প্রকাশিত হইয়াছিল। জুলাই ১৮৫১ সংখ্যা ‘দি ক্যালকাটা ক্রিশ্চিয়ান অব্‌জার্ভার’ লেখেন:

 ‘‘One of the most influential natives in Calcutta, Debendernauth Tagore, has added his own daughter to the long list of eighty female children already receiving instruction in the Institution, and the Raja Kri Krishna Bahadur, who occupies the prominent position in Hindu Society in the metropolis has accepted the office of its president.’’

 দেবেন্দ্রনাথ ৮ই জুলাই ১৮৫৯ তারিখে রাজনারায়ণ বসুকেও এই বিষয়টির কথা এক পত্রে এইরূপ লিখিলেন, “আমি বেথুন সাহেবের বালিকা বিদ্যালয়ে সৌদামিনীকে প্রেরণ করিয়াছি, দেখি ও দৃষ্টান্তে ফল কি হয়।” (পত্রাবলী, প. ৪১)। সৌদামিনী দেবী ‘পিতৃস্মৃতি’তেও (প্রবাসী—ফাল্গুন ১৩১৮) বলিয়াছেন যে, তাঁহার পিতৃদেব তাঁহাকে এবং তাঁহার খুড়তুতো বোনকে বেথুন স্কুলে ভর্তি করিয়া দেন।

 সৌদামিনী দেবীর বিবাহ হয় বড়বাজারস্থ বিখ্যাত গঙ্গোপাধ্যায় বংশের অবিনাশচন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়ের পুত্র সারদাপ্রসাদের সঙ্গে (১৮৫৫?)। ঠাকুরবাড়ির রীতি অনুযায়ী সারদাপ্রসাদ ঘরজামাই ছিলেন। তিনি দেবেন্দ্রনাথের জমিদারী পরিচালনায় নিযুক্ত হন। দেবেন্দ্রনাথ-পরিচালিত বিভিন্ন সমাজ-কর্মের সঙ্গে তাঁহার যোগ ছিল। ব্রাহ্মবিবাহ আইন বিধিবদ্ধ হইবার প্রাক্কালে আদি-ব্রাহ্মসমাজের পক্ষে, ভারত সরকারের নিকট লিখিত প্রতিবাদ জ্ঞাপনের জন্য নবগোপল মিত্রের সঙ্গে সারদাপ্রসাদ সিমলায় যান। সৌদামিনী স্নেহবৎসল ও সেবাপরায়ণ ছিলেন। দেবেন্দ্রনাথের পত্নী-বিয়োগের

২০৭