পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/২৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আমেদাবাদ হইতে একখানি পত্রে ‘বামাবোধিনী পত্রিকা'য় আলোচনা করেন। তিনি বাংলা সাহিত্যের সেবায়ও তৎপর ছিলেন। 'ভারতী'তে বিভিন্ন সময়ে তাঁহার কয়েকটি রচনা প্রকাশিত হয়। বৈশাখ ১২৯২ হইতে এক বৎসর কাল তিনি 'বালক’ সম্পাদনা করেন। এখানি কিশোরপাঠ্য সচিত্র মাসিক পত্রিকা। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির ছেলে-মেয়েদের বাংলা রচনায় উৎসাহ দানের নিমিত্তই ইহা মুখ্যতঃ প্রকাশিত হয়। সুরেন্দ্র-নাথ, শলেন্দ্রনাথ, হিরন্ময়ী দেবী, সরলা দেবী প্রমুখ বাড়ির বালক-বালিকাদের রচনা ইহাতে বিশেষভাবে স্থান পাইত। এক বৎসর চলিবার পর ‘বালক’ ‘ভারতীর' সঙ্গে মিলিত হয়। জ্ঞানদানন্দিনীর শিশুপাঠ্য দুইখানি পুস্তক প্রকাশিত হইয়াছিল- ১। টাক ডুম্ ডুম্ ডুম্ (নাটিকা)—১৯১০ এবং ২। সাত-ভাই চম্পা (নাটিকা। ১৯১১।

 হেমপ্রভা বসু: ভগবানচন্দ্র বসুর কনিষ্ঠা কন্যা এবং আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর কনিষ্ঠা ভগিনী। তিনি বেথুন হোস্টেলে থাকিতেন, এবং সরলা দেবীর বন্ধুরূপে ছুটির দিনে তাহাদের বাড়িতে আসিতেন। হেমপ্রভা সরলা দেবীর দুই শ্রেণী নিম্নে পড়িতেন। তিনি ১৮৮৮ সনে এণ্ট্রান্স, ১৮৯০ সনে এফ-এ, ১৮৯৪ সনে বি-এ এবং ১৮৯৮ সনে এম-এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি প্রথমে বেথুন স্কুলের শিক্ষয়িত্রী এবং পরে বেথুন কলেজের অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হন। তিনি আজীবন কৌমার্যব্রত অবলম্বন করেন।

 ভগবানচন্দ্র বসু (? ১৮২৯-৯২): ঢাকা জেলার বিক্রমপুরে রাড়িখাল গ্রামে ভগবানচন্দ্রের জন্ম হয়। তিনি ছিলেন রামশংকর সেনের সতীর্থ এবং ঢাকা কলেজের উত্তীর্ণ ছাত্র। তিনি বেথুন সাহেবের দ্বারা স্ত্রী-শিক্ষা বিষয়ে বিশেষরূপে অনুপ্রাণিত হন। প্রথমে জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং পরে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট রপে তিনি সরকারী কার্যে লিপ্ত ছিলেন। তিনি মানব-দরদী ছিলেন, এবং এক প্রসিদ্ধ ডাকাতকে কারাবাস অন্তে নিজ গৃহে স্থান দিয়া এই মানবিকতার চরম দৃষ্টান্ত প্রদর্শন করেন। ইহার মুখে অসম-সাহসিকতার নানা গল্প শুনিয়া জগদীশচন্দ্র শৈশবে মুগ্ধ হইয়া যাইতেন। পরবর্তী কালের তাঁহার বেপরোয়া নির্ভীক মনোবৃত্তি কতটা এই ডাকাত-ভৃত্যের সঙ্গলাভের ফল, একথা তিনি মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করিয়াছেন। ভগবানচন্দ্র সরকারী কর্ম ব্যতিরেকে স্বদেশের শিল্পোনতিকল্পে প্রচুর অর্থ ঢলিয়াছিলেন, কিন্তু ইহা লাভজনক না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তাঁহাকে প্রায় সর্বস্বান্ত হইতে হয়।

 ভগবানচন্দ্রের পাঁচ কন্যা। জ্যেষ্ঠা কন্যা স্বর্ণপ্রভা বসু। তিনি গৃহে প্রথমে বাংলা ও পরে ইংরেজী ভাষা শিখিয়া উভয় সাহিত্যেই বুৎপন্ন হন। ১৮৬৮ সনে আনন্দমোহন বসুর সঙ্গে তাঁহার বিবাহ হয়। ১৮৬৯ সনে ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজের প্রতিঠা-দিবসে যে দুইজন নারী কেশবচন্দ্রের নিকট ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষিত হইয়াছিলেন তাঁহাদের মধ্যে স্বর্ণপ্রভা একজন। তিনি স্ত্রী বিদ্যালয় পরিচালনা এবং অন্যান্য জনহিতকর কার্যে স্বামীর একান্ত সহায় ছিলেন। বর্ণপ্রভা সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের অন্তর্গত বঙ্গ-মহিলাসমাজেরও প্রতিষ্ঠাতা।

 ভগবানচন্দ্রের অপর চারি কন্যা-স্বর্ণপ্রভা বসু, লাবণ্যপ্রভা বসু, হেমপ্রভা বসু, চারুপ্রভা বসু। স্বর্ণপ্রভা ১৮৮০ সনে বেথুন স্কুল হইতে প্রবেশিকা পরীক্ষা পাস করেন। তাঁহার বিবাহ হয় আনন্দমোহন বসুর অনুজ বিখ্যাত হোমিওপ্যাথি মোহিনী মোহন বসুর সহিত। লাবণ্যপ্রভা দীর্ঘকাল সাহিত্যসেবা করিয়া গিয়াছেন। তাঁহার পুস্তকগুলি পাঠ্য এবং সাহিত্যপদবাচ্য। ১৯০৭ সনে ডাক্তার হেমচন্দ্র সরকারের সঙ্গে তিনি পরিণীতা হন। হেমপ্রভা চতুর্থ এবং চারুপ্রভা পঞ্চম কন্যা। উভয়েই উচ্চশিক্ষিতা, সেবাপরায়ণা এবং বিভিন্ন কর্মে রত ছিলেন।

২১৮
২১৮