পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/২৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
॥ তেইশ॥

 যতীন বাঁড়ুয্যে: যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় (? ১৮৭৭-১৯৩০)। যতীন্দ্রনাথ আদি যুগের বিখাত বিপ্লবী। প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া তিনি এলাহাবাদের কায়স্থ পাঠশালায় (কলেজ) ভর্তি হন। তখন 'প্রবাসী' ও 'মডার্ন-রিভিয়ু'র প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় কায়স্থ পাঠশালার প্রিন্সিপ্যাল ছিলেন। যতীন্দ্রনাথের এলাহাবাদ গমনের আসল উদ্দেশ্য ছিল ‘দেহাতী হিন্দী' শেখা, যাহাতে সৈন্যদলে সহজে ভর্তি হইতে পারেন। তখনকার দিনে বাঙ্গালীর পক্ষে মৈনাবিভাগে ভর্তি হওয়া নিষিদ্ধ ছিল। তিনি বরদার সৈন্যদলে ছদ্মনামে প্রবেশ করেন। এখানে অরবিন্দ ঘোষের (শ্রীঅরবিন্দ) সঙ্গে তাঁহার পরিচয় হয়। যতীন্দ্রনাথ ও অরবিন্দের ভিতরে বৈপ্লবিক উপায়ে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা লাভ-বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলিয়াছিল। রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কথিত আছে, শ্রীযুক্ত অরবিন্দ ঘোষ যতীন্দ্রনাথের নিকট হইতে স্বাধীনতার মন্ত্র লাভ করেন।” প্রসিদ্ধ বিপ্লবী ডাঃ যাদুগোপাল মুখোপাধ্যায় ও ডাঃ ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত যতীন্দ্রনাথ প্রমখাৎ শ্রবণান্তর অনুরুপ উক্তিই করিয়াছেন। বাঙ্গালী বলিয়া পরিচিত হইবার উপক্রম হইলে যতীন্দ্রনাথ সৈনাবিভাগ ত্যাগ করেন এবং অরবিন্দের পত্র লইয়া ১৯০২ সনে কলিকাতায় আসিয়া সরলা দেবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। অতঃপর কলিকাতাস্থ ১০৮নং আপার সারকুলার রোড়ে যতীন্দ্রনাথ একটি ক্লাব স্থাপন করেন। শ্রীবারন্দ্রকুমার ঘোষ ১৯০৩ সনের প্রারম্ভে যতীন্দ্রনাথের সঙ্গে যোগদান করিলেন। কিন্তু ১৯০৪ সন নাগাদ এই বিপ্লবী সঙ্ঘটি নানা কারণে ভাঙ্গিয়া যায়। যতীন্দ্রনাথ দক্ষ ঘোড়সওয়ার ছিলেন। তিনি সঙ্ঘের সভ্যদের ডনকুস্তি, অশ্বারোহণ, অসিচালনা প্রভৃতি শিক্ষা দিতেন, আবার তাহাদের বৈপ্লবিক উদ্দেশ্য সিদ্ধির নিমিত্ত যোগ্য ব্যক্তিদের দ্বারা বিভিন্ন দেশের বৈপ্লবিক ইতিহাস শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করিয়াছিলেন। যতীন্দ্রনাথ অশ্বারোহণ বালীগঞ্জ সারকুলার রোড় অঞ্চলে গিয়া বিলাতফেরত ব্যারিস্টার এবং বিত্তশালী ব্যক্তিদের নিকট হইতে অর্থ সংগ্রহ করিতেন। ব্যারিস্টার পি. মিত্র ছিলেন এই বিপ্লবী সঙ্ঘের সভাপতি। যতীন্দ্রনাথ সরলা দেবী সম্পাদিত 'ভারতী’তে ইটালীর স্বাধীনতা আন্দোলনের নায়ক ম্যাটসিনি ও গ্যারিবল্ডীর জীবনবৃত্ত লিখিয়াছিলেন। বিপ্লবী সঙ্ঘ ভাঙ্গিয়া যাইবার কিছুকাল পরে যতীন্দ্রনাথ সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। তাঁহার সন্ন্যাসাশ্রমের নাম-স্বামী নিরলম্ব। আলিপুর বোমার মামলায় তিনি ধত হন, কিন্তু প্রাথমিক প্রমাণাভাবে চারিয়াস হাজতবাসের পরই তিনি মুক্তিলাভ করেন।


____________