পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দু-একখানা কাগজ ভাগাভাগি করে গান অভ্যাসের পর প্রায় তৃতীয় দিনের মধ্যেই সকাল-সন্ধ্যা দুবেলার গানের বইয়ের বিশ-পঁচিশখানি প্রুফ আদিব্রাহ্মসমাজ প্রেস থেকে তুলিয়ে আনিয়ে প্রত্যেক গায়কের হাতে একখানি করে বই বেঁটে দিয়ে স্বয়ং আসরে বসে শেখান কার্যে ব্রতী হতে থাকলেন রবিমামা।

 আগেকার ব্রহ্মসঙ্গীতগুলির ভাব অদ্বৈতমূলক, উপনিষদের শ্লোকাবলীর প্রায় অনুবত্তি, আমাদের পক্ষে তার মর্মে প্রবেশ দুরূহ ছিল। কিন্তু রবিমামার আমলের সঙ্গীত গাম্ভীর্য ও মাধুর্য মিশিয়ে শিশুচিত্তেও একটা অব্যক্ত আলোড়ন আনতে থাকল। কিছু বুঝি, কিছু বুঝি না, কিন্তু হৃদয় যেন কোন সুদূর আনন্দের আঁচল ছুঁয়ে আসে। এমন কি এই গানটি আমার ন-দশবছরের শিশু-মনের কোন কবাটে ঘা দিত—“তবে কি ফিরিব ম্লান মুখে সখা—আঁধার সংসারে আবার ফিরে যাব।”

 শুধু ধর্মসঙ্গীতে নয়, এখন থেকে কত ভাবের কত গানে বাড়ি সদাগুঞ্জরিত হতে থাকল। বাড়িতে শেখা দিশী গানবাজনায় শুধু নয়, মেমেদের কাছে শেখা য়ুরোপীয় সঙ্গীতের চর্চায়ও আমাদের উৎসাহদাতা ছিলেন রবিমামা।

 আমার একটা নৈসর্গিক কুশলতা বেরিয়ে পড়ল—বাঙ্গলা গানে ইংরিজী রকম কর্ড দিয়ে ইংরিজী ‘piece’ রচনা করা। একবার রবিমামা আমাদের একটা ‘task’ দিলেন—তাঁর “নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ” কবিতাকে পিয়ানোতে প্রকাশ করা। একমাত্র আমিই সেটা করলুম। মনে পড়ে তাতে কি অভিনিবেশ শিক্ষা দিলেন। কি গভীর ভাবে কাব্যের অর্থবোধ ও সঙ্গে সঙ্গে সুরে ও তালে তাকে দেহদান করার অপূর্ব গহন আনন্দকূপে আমায় ডুব দেওয়ালেন।

 তখন আমার বয়স বার বৎসর। হঠাৎ সেই জন্মদিনের সকালে রবিমামা এলেন কাশিয়াবাগানে হাতে একখানি য়ুরোপীয় music লেখার manuscript খাতা নিয়ে। তার উপর সুন্দর করে বড় বড় অক্ষরে লেখা—“‘Socatore’—Composed by Sarola।”

 ‘সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে’ বলে রবিমামার একটি ব্রহ্মসঙ্গীতকে আমি রীতিমত একটি ইংরেজী বাজনার pieceএ পরিণত করেছিলুম। পুরোদস্তুর ইংরেজী piece, পিয়ানোতে বা ব্যাণ্ডে বাজাবার মত।—না জানলে কেউ চিনতে পারবে না এর ভিতরটা দিশী গান, জানলে—তারা

৩১