পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কৃষ্ণকথিতা নীতি পরিত্যাগ করিয়া শূলপাণি ও রঘুনন্দনের পদানত—লোকহিত পরিত্যাগ করিয়া তিথিতত্ত্ব, মলমাসতত্ত্ব প্রভৃতি আটাইশ তত্ত্বের কচকচিতে মন্ত্রমুগ্ধ। আমাদের জাতীয় উন্নতি হইবে ত কোন্‌ জাতি অধঃপাতে যাইবে? যদি এখনও আমাদের ভাগ্যোদয় হয়, তবে আমরা সমস্ত হিন্দু একত্র হইয়া, ‘‘নমো ভগবতে বাসুদেবায়” বলিয়া কৃষ্ণপাদপদ্মে প্রণাম করিয়া, তদুপদিষ্ট এই লোকহিতাত্মক ধর্ম গ্রহণ করিব।[১] তাহা হইলে নিশ্চিতই আমরা জাতীয় উন্নতি সাধিত করিতে পারি।

সাত

বঙ্কিম

ছোটবেলার ঐ একটি ঘটনাতে—তাঁর সঙ্গে মতবিরোধ প্রকাশের জন্য রবীন্দ্রের বক্তৃতা শুনতে যাওয়ায় বঙ্কিম নামের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয়। একটু বড় হলে কাশিয়াবাগানে তাঁর সব বইয়ের মধ্যে ‘ইন্দিরা’ বইখানি প্রথমে পড়ার রসভোগ করি। ক্রমে ক্রমে আর সব বই একে একে পড়তে অনুমতি পেলুম। তাঁর প্রতিভাচ্ছটা হৃদয় আলোকিত করতে থাকল।

 একবার একটা ১১ই মাঘের উৎসবে বাড়ির ছেলেমেয়ে-গায়নমণ্ডলী আমরা গান গাইতে গাইতে হঠাৎ অনুভব করলুম আমাদের পিছনে একটা নাড়াচাড়া সাড়াশব্দ পড়ে গেছে। কে এসেছেন? পিছন ফিরে ভিড়ের ভিতর হঠাৎ একটি চেহারা চোখে পড়ল—দীর্ঘনাসা, তীক্ষ্ণ উজ্জ্বল দৃষ্টি, মুখময় একটা সহাস্য জ্যোতির্ময়তা। জানলুম তিনি বঙ্কিম। যে বঙ্কিম এতদিন তাঁর বইয়ে রচনামূর্তিতে আমাকে পেয়ে বসেছিলেন আজ পেলুম তাঁকে প্রকৃতির তুলিতে হাড়েমাসে রঞ্জনা মূর্তিতে।

 তারপরে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ সংস্পর্শ আনলে আমার লেখা পড়ে তাঁর চিঠি। সে চিঠি ত যে সে চিঠি নয়। তার দুচারটি মাত্র সেণ্টেন্স বঙ্কিমেরই সেণ্টেন্স বটে!

 “ভারতী’’তে আমার আঠার ঊনিশ বৎসরের লেখা ‘রতিবিলাপ’ ও


৪৪
  1. বেন্থামের কথা ইংলণ্ড শুনিল—কৃষ্ণের কথা ভারতবর্ষ শুনিবে না?