পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

‘মালবিকাগ্নিমিত্র’ পড়ে তাঁর লেখা চিঠি। সে চিঠি সাহিত্য দায়রায় দণ্ডায়মান একজন নবীনের উপর তাঁর রায়—বা তাকে দুই বাহু বাড়িয়ে আদর করে নেওয়া। যদিও রবিমামার চিঠিতে তাঁরও appreciation ব্যক্ত হয়েছিল, কিন্তু তাঁর চেয়েও সেদিন সাহিত্যসম্রাট ও সাহিত্যের ন্যায়াধীশ বঙ্কিমের রায়ে নিজেকে বেশি চরিতার্থ মনে করলুম। এই দুজনের অভিমত আমার সাহিত্যজীবনে আনন্দের যাত্রাপথে পর্যাপ্ত পাথেয় হল। কিন্তু হায়! এমন হাত দুটির চিঠিগুলি রক্ষা করে—সাহিত্যিক মিউজিয়মে সেগুলি উপঢৌকন দেওয়ার সৌভাগ্য আমার হল না। আমার জীবন-নিয়ন্ত্রিণী দেবী ভগবতীর নির্দেশ হল—“খেয়ে নে, যত পারিস আনন্দ, তাতে পুষ্ট হয়ে এগিয়ে চল, জমা থাকবে না কিচ্ছু।”

 পঞ্জাবের পোলিটিকাল হোমাগ্নিতে আমার সব সঞ্চিত সাধের চিঠিপত্রগুলি ভস্মসাৎ হল। একটা ধরপাকড়ের আতঙ্কের দিনে একদিন বাড়িতে আমার অনুপস্থিতির সুযোগে আমাকে নিরাপদ করার শুভ ইচ্ছায় আমার যত কিছু বাঙলা চিঠিপত্র প্রবন্ধাদি—এমন কি বাক্সে রাখা ইংরেজি চিঠিগুলিও—কেম্ব্রিজ-কবি মনোমোহন ঘোষের কাব্যরসে সরস, সাধু তীর্থরামের দার্শনিক ও কথঞ্চিৎ স্বদেশী রসসঙ্কুল এবং জস্টিস উড্‌রফের অপূর্ব তন্ত্রদৃষ্টি-উদ্ভিন্ন সমুন্নত তথ্যময় এক এক তাড়া চিঠি আমার অজ্ঞাতেই হিতৈষী আত্মীয় সুহৃদেরা অগ্নিদেবতাকে উৎসর্গ করলেন। পঞ্জাবে আমার সারাটা বৈবাহিকজীবনই প্রায় যুদ্ধের ক্যাম্প লাইফবৎ ছিল। আগে চলা ও পিছনের সব কিছু পুড়িয়ে যাওয়া।

 শ্রীশ মজুমদার প্রভৃতি বন্ধুদের কাছে বঙ্কিম আমার লেখাগুলি সম্বন্ধে নাকি নিজের সবিস্ময় অভিমত ব্যক্ত করেছিলেন—তা তাঁদের লিখিত বঙ্কিমের জীবন-প্রসঙ্গে লিপিবদ্ধ আছে। কিন্তু বঙ্কিমের লিপি আর অন্যের লিপিতে অনেক তফাৎ। বঙ্কিমের লিপিখানি ছিল পুরো বঙ্কিমী ঠাটের সাহিত্যের একখানি হীরের কুচি। বিদূষক সম্বন্ধে আমার মন্তব্যের সঙ্গে তাঁর মতের মিল হয়নি। তার উল্লেখ করে “গরীব বিদূষকের’’ পক্ষ নিয়ে তাঁর সরস লেখনী দুই এক ছত্রে কি হাস্যের ছটাই তুলেছিল। তাই বলছি তাঁর চিঠিখানি ছিল একটি সাহিত্যিক ক্ষুদ্র রসকুম্ভ। পলিটিক্স-দানবী সাহিত্য-দেবীর সঙ্গে আড়ি করে তাঁর ঘর-সাজান একটি সুশোভন কারুবস্তুকে ফেলে দিলে বিনাশের হুতাশন-গর্ভে।

 বঙ্কিমের চিঠির সাথী হয়ে এসেছিল সেদিন তাঁর নিজের এক সেট

৪৫