পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

শাড়ি পরলে আর veilএর দস্তুর বর্জন করে আমাদের বাড়ির মেয়েদের মত ওড়না পরলে। কিন্তু brides-maid প্রথা বজায় রইল। তবে তারও সংখ্যা এক আমাতেই পর্যবসিত হল, খুসী আর কাউকে চায় না। Brides-maidsদের পোশাক সরবরাহ করেন বা তার খরচা বহন করেন বর এই হল দস্তুর। ডাক্তার ডি এন রায়ের খরচায় দিব্যি সেজেগুজে আমি চললম খুসীর পিছনে পিছনে, গিয়ে বসলুম বিবাহ সভায় গুরুগম্ভীরভাবে তার কাছাকাছি।

 পশ্চিমে নিতবরের প্রথা প্রচলিত আছে। বাঙলায় নিতবরের সঙ্গে সঙ্গে নিতকনেও হয়। আমি একবার সেই সত্যিকার বাঙালী দস্তুরের নিতকনেও হয়েছিলুম—প্রতিভা দিদির বিয়েতে। প্রতিভা দিদির নিজের ছয়টি সহোদরা ছোটবোন থাকতে আমাকে যে নিতকনে করতে চাইলেন তার কারণ এই যে, আমি তাঁর ভাবী স্বামী আশু চৌধুরীর একটি অতি প্রিয় বোনের মত ছিলুম—তাঁর নিজের ছোট বোন ও বোনঝি মেনা ও প্রিয়ম্বদার সখী হিসেবে। কনের মত লাল টুকটুকে পাৎলা বেনারসী শাড়ি পরে, কনের সঙ্গে সঙ্গে যোড়াসাঁকোর উপাসনার দালানে বিবাহসভায় গিয়ে তাঁকে বসান উঠান এই ছিল আমার নির্ধারিত কর্তব্য। সেদিন কনের পরই আমারই প্রতি সবায়ের দৃষ্টি। হঠাৎ খুব একটা আত্মগৌরবের আনন্দ অনুভব করলুম।

 ‘জন্মদিন’-এর কথা দিয়ে আরম্ভ করেছিলুম। ব্রাহ্ম পরিবারে জন্মদিন করা চালু হয়েছিল। ধর্মপ্রাণ মেমেরা যেমন সেদিন পাদরীকে দিয়ে প্রার্থনার দ্বারা অনুষ্ঠানের আরম্ভ করতেন, সাধারণ ব্রাহ্মেরাও তেমনি তাঁদের আচার্যদের দিয়ে প্রথমে উপাসনা করিয়ে শেষে খাওয়া-দাওয়ান ও উপহার দেওয়াদেয়ির ব্যবস্থা করতেন। কর্তাদাদামশায়কৃত ব্রাহ্ম অনুষ্ঠান পদ্ধতিতে জন্মদিন উল্লিখিত না হওয়ায় যোড়াসাঁকোয় মেজমামীর ছেলেদের জন্মদিনের অনুষ্ঠানও উপাসনা-বর্জিত হয়ে শুধু আমোদপ্রমোদ, মেলামেশা ও খাওয়া-দাওয়ার উৎসব-মুর্তিতে দেখা দিয়েছিল। হেমপ্রভা সে বছর আমার জন্মদিন খুঁড়ে বের করলে। আমার জন্যে আমাদের বাড়িতে যা কস্মিনকালে হয়নি তা সেবারও হয়নি। বাড়ির কারোই খোঁজখবরে আসেনি সেদিনটা আমার জন্মদিন বলে। কিন্তু আমার প্রতি স্নেহমুগ্ধ হেমপ্রভা সেদিনটাকে গৌরব দিয়ে ভোর হতেই একখানি ইংরেজী গল্পের বই আমার হাতে উপহার দিলে, ভিতরে তার লেখা—“সরলার জন্মদিনে হেমপ্রভার ভালবাসার সহিত উপহার।”

৫১