পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 জান্‌তে পেলুম, নতুনমামা ও রবিমামার জন্মদিন কাছাকাছি তারিখে। রবিমামার হল ইংরেজি ৭ই মে, আর নতুনমামার বোধহয় ৫ই মে। তাই পরের বছর থেকে নতুনমামার জন্মদিনও আরম্ভ হল। সেটা মেজমামীই করলেন। নতুনমামীর মৃত্যু কয়েক বৎসর পূর্বে হয়েছে, সেই পর্যন্ত নতুনমামা ওঁদের সঙ্গেই থাকেন। এসবের অনেক পরে কর্তাদাদামহাশয়ের জন্মদিন যোড়াসাঁকোর উঠানে উপাসনাপূর্বক প্রচলিত হল।

 গৃহের ভিতর গৃহনির্মাত্রী মেয়েরাই। তাঁরাই পরিবারটিকে কতকগুলি আচার-অনুষ্ঠানের বন্ধনীতে বাঁধেন, আরম্ভে সেগুলি কেবলমাত্র মেয়েলী হলেও ক্রমে তারাই সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়। মেজমামীর প্রবর্তিত নিজের ছেলেমেয়ের জন্মদিনটুকু ক্রমে যোড়াসাঁকোর ঘরে ঘরে সঙ্গোপনে বা প্রকাশ্যে প্রতি মায়ের ছেলেমেয়ের জন্যে প্রসারিত হতে হতে এ পরিবারে একটি পারিবারিক আচারের মত হয়ে উঠল এবং নিম্নমুখিতা থেকে ঊর্ধ্বমুখিতা নিলে, একপুরুষে বড়দের জন্মদিনও প্রবর্তিত হল।

 মেজমামী আর একটি জিনিসের প্রবর্তক—এই পরিবার থেকে আরম্ভ করে সমস্ত বাঙলাদেশে। সেটি শাড়ি পরার ভঙ্গিমা পরিবর্তন। দাদামশায়ের আমল থেকেই মেয়েদের পোশাক সম্বন্ধে এ পরিবারের মস্তিষ্কে নানারকম আন্দোলন চলছে। শুনতে পাই, অনেক পরখ করে করে দাদামহাশয় তাঁর বাড়ির কুমারী মেয়েদের জন্যে বাইরের পোশাক ‘পেশোয়াজ’ হওয়াই সাব্যস্ত করেছিলেন। বড়মাসিমার জ্যেষ্ঠা কন্যা ইরুদিদির বিবাহপূর্বের সেই পোশাকপরা সুন্দর অয়েল পেণ্টিং অবনদাদাদের বাড়িতে বিদ্যমান ছিল। কিন্তু ইংরেজি ফ্রকটা সহজসাধ্যতায় পেশোয়াজকে পদচ্যুত করলে। বিবাহিত মেয়ে ও বউদের শাড়ি পরার ভঙ্গিমার সমস্যা তাতে মিটল না। এ-বাড়ির বড়রা কেউ ব্যারিস্টার মনোমোহন ঘোষ প্রভৃতির পত্নীদের মত গাউন পরতে রাজি নয়। অথচ বাঙালীকেতায় শাড়ি জড়ানতে সৌষ্ঠব নেই। মেজমামী যখন স্বামীর সঙ্গে বোম্বাই গেলেন, সেখানে পার্শী ও গুজরাটি মেয়েদের শাড়ি পরার ধরন তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করল। সেটি পশ্চিমের মেয়েদেরই ধরন—যা ভারতের চিত্রকলায় চির-আদৃত। মেজমামী সেটি গ্রহণ করলেন—খালি আঁচলের ধাঁচটা বাঙালী রকমই রাখলেন। যখন আমার মায়ের সঙ্গে মেজমামী দেশে ফিরলেন, দুইজনেই সেই রকমে শাড়িপরা—তাই বাড়িশুদ্ধ সকলেই সেই ধাঁচটাই ধরে নিলেন। ক্রমে তাঁদের দেখাদেখি সাধারণ

৫৩