পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ব্রাহ্মসমাজের রুচিশালিনী কতকগুলি মেয়েরাও এটা গ্রহণ করলেন। পরে সব ব্রাহ্মপরিবারে এটা ছড়িয়ে পড়ল। এই রকমে পরা শাড়ির নাম ব্রাহ্মরা রেখেছিলেন ‘ঠাকুরবাড়ির শাড়ি’। ব্রাহ্ম মেয়েরা সবাই পরতে আরম্ভ করায় দেশের লোক তার নাম দিলে ‘ব্রাহ্মিকা শাড়ি’।

 বাঙালী মেয়ের শাড়ি পরার ক্রমবিবর্তনের দ্বিতীয় ধারা এল দিল্লীদরবারের পর। সেই দরবারে সমস্ত ভারতবর্ষের রাণী-মহারাণী সম্মেলনে তাঁদের সঙ্গে সাজের সঙ্গতি রাখার জন্যে কুচবেহার মহারাণী সুনীতি দেবী ও ময়ূরভঞ্জ মহারাণী সুচারু দেবী অধুনাতন নবীনতম পন্থায় শাড়ি পরতে লাগলেন এবং পরে দেশে ফিরে এসেও সেটি জারী রাখলেন। এ নাকি কুচবেহারের ও উড়িষ্যার—তাঁদের স্ব স্ব শ্বশুরকুলের নিজস্ব পন্থা, এতদিন তার থেকে নিজেদের বাঙালীর অভিমানে নিজেদের দূরে দূরে রেখেছিলেন। আজ ভারতের রাজকুলের সঙ্গে সাম্যে সেটি গ্রহণ করলেন। এই পরিধানপন্থার সুশ্রীতা বাঙালীমাত্রের মনোগ্রাহী হল, এই হয়ে গেল বাঙলাদেশের শাড়ির ফ্যাশন এবং এ ফ্যাশন সমগ্র ভারতবর্ষের সঙ্গে বাঙলার একতা এনে দিলে। বাঙালী মেয়েদের পরিচ্ছদে ভারতীয় ঐক্যসাধনে মেজমামী প্রথমে পথপ্রদর্শিকা। এই দ্বিতীয় রকমটি সেই ঐক্যেরই আর এক পদক্ষেপ মাত্র। কিন্তু পুরুষদের পরিচ্ছদে এখনও সে ঐক্যের অভাব রয়ে গেছে। বাঙালীর সামাজিক সাজ যে পাৎলা ধুতি, চাদর ও পাঞ্জাবী—শীতকালে শাল, সেটা অন্য প্রদেশে সব সময় চলতে পারে না। উত্তর-পশ্চিমের পুরুষদের সামাজিক সাজ যে চুড়িদার পাজামা ও আচকান বা সেরবানি—সেটা বাঙালীর বিবাহ বা শ্রাদ্ধসভায় অচল হলেও অন্য সভায় চলে। আমাদের পরিবারে বোধহয় নবাবদের আমল থেকেই সেইটিই পুরুষদের বাইরের পোশাকস্বরূপ গাত্রভুষণ হয়ে চলে আসছে। শিরোভূষণটি পাগড়ি বা টুপির মধ্যে দোলায়মান থেকেছে। রবিমামার ও তাঁর অগ্রজদের বিভিন্ন ফটো থেকে তা সুস্পষ্ট হবে। পাগড়ীটি সচারু করে বেঁধে দেওয়ার জন্যেও দেবরদের মাথার উপর মেজমামীর হস্তচারণা অনেকবার হয়েছে। যোড়াসাঁকোর পরিবারকে আমোদ-উৎসবে সাজসজ্জায় এক করে বাঁধতে মেজমামীর অনেক দিকে অনেকটা হাত ছিল—তার একটুখানির উল্লেখ করলুম। কিন্তু মেজমামারও কম ছিল না। তিনি বোম্বাইপ্রবাসে থাকতে অধিকাংশ আত্মীয়ই তাঁর ওখানে মাঝে মাঝে গিয়ে কাটিয়ে আসতেন। তাঁদের মধ্যে হংসপ্রকৃতির যাঁরা—নীর থেকে ক্ষীর নিতে জানতেন—

৫৪