পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দিদি জন্মে সেটা ভুলতে পারেননি। বাবামশায়ের সঙ্গে মন-ভাঙ্গভাঙ্গি! এতদূর ক্ষতি করা!

 দিদির স্নেহে আমার মাতৃস্নেহের অভাব অনেকটা পূরণ হয়েছিল। আমার যখন যা সাধ হত তাঁকে ধরলেই পেতুম। একবার জানালুম, রোজ সন্ধ্যেবেলা একটি করে বেলফুলের মালা পেলে ভারি মন খুশী হয় আমার। অম্নি বাজার থেকে সেটা নিয়মমত আসার বন্দোবস্ত করে দিলেন দিদি। একবার যোড়াসাঁকোর একটি মেয়ের গলায় একটি অভিনব প্যাটার্নের সুন্দর সোনার নেকলেস দেখে আমারও সখ হল সেই রকম নেকলেস পরতে। কে দিলে স্যাক্‌রাকে দিয়ে গড়িয়ে ঠিক সেই রকম নেকলেস আমায়? মা নয়—দিদি। তখন তাঁর বিয়ে হয়েছে—নিজের সংসারের নিজে হর্তাকর্তা। যাকে যা খুশী দিতে পারেন, যেমন ইচ্ছে খরচ করতে পারেন।

 দিদির বিয়ে হয় ষোল বৎসর বয়সে আমাদের পিসেমশায়ের ভ্রাতুষ্পুত্র ফণিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। সিমলার বাড়িতে থাকতেই ফণিদাদা পিসেমশায়ের সঙ্গে প্রায়ই আমাদের বাড়িতে আসতেন। তখন থেকেই তাঁর দিদিকে বিয়ে করবার ইচ্ছা হয়। সেই অভিলাষ পূর্ণ করার জন্যে গিলক্রিস্ট স্কলারশিপের প্রচেষ্টায় কৃতকার্য হয়ে বিলেত যান। সেখান থেকে গবর্নমেণ্টের এডুকেশন সার্ভিস নিয়ে এসে প্রথমে প্রেসিডেন্সী কলেজে বোটানির অধ্যাপক হন। তার পরে রাজশাহী ও হুগলী কলেজে বদলি হন। শেষজীবনে প্রেসিডেন্সী ও বর্ধমান ডিভিসনে ইন্সপেক্টর হন। যতদিন কলকাতায় ছিলেন দিদিরা কাশিয়াবাগানেই থাকতেন।

 দাদামশায়ের নাত্নীদের সবায়ের যেমন হয়, দিদিরও বিয়ে তেমনি হয়েছিল যোড়াসাঁকোর উপাসনার দালানে। আমরা সকলে সেই উপলক্ষে কাশিয়াবাগান থেকে যোড়াসাঁকোয় গিয়ে ছিলাম কিছুদিন ধরে। দিদির বিয়েতে দিদির পরম বন্ধ, খুসী নিতকনে হয়ে দিদির সঙ্গে সভায় গিয়ে বসেছিল। তখনো আমাদের বাড়ির মেয়েদের দালানে বিয়ের সভায় যাওয়া দস্তুর হয়নি। খুসীর পরনে সবুজ রঙের পাৎলা বেনারসী। ঐ রঙটা তার পছন্দ। আমরা সবাই বল্লুম, “অন্য রঙ পর, সবুজ রঙে তোমায় ভাল লাগে না।” সে বল্লে, “আমার সবুজ রঙ ভাল লাগে, নাইবা সবুজ রঙে আমায় ভাল লাগল।” বাসরের আমোদ-উৎসবস্বরপ রবিমামা ‘বিবাহোৎসব’ বলে একটি গীতি-নাটিকা রচনা করে অভিনয় করালেন

৫৬