পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দিদির সমবয়সী বা তাঁর চেয়ে কিছু বড় বোনেদের দিয়ে। এতে দিদির খুসীও ছিল। সরোজাদিদি তাতে ছিলেন নায়িকা—অন্যরা সব তাঁর সখী। দুজন পুরুষ ছিল, একজন নায়ক ও একজন তার আমুদে সখা। দ্বিপুদাদার প্রথমা স্ত্রী দিনুর মা—সুশীলা বৌঠান ও সুপ্রভাদিদি—এই দুজনে ঐ দুই পুরুষ সেজেছিলেন।

 বিয়ের পর থেকে দিদির বাপ-মা ও ভাই-বোনের প্রতি টান বিশেষ করে প্রকট হল। সব বিষয়ে মায়ের সাহচর্য করতে লাগলেন। সে সময় থিয়সফির খুব প্রচার। আমাদের বাড়িতে মহিলা-থিয়সফিক্যাল সভা হত, তার প্রেসিডেণ্ট মা। যাঁদের স্বামী বা বাড়ির পুরুষেরা থিয়সফিস্ট, তাঁদেরই স্ত্রী ও বাড়ির মেয়েরা আসতেন। কলকাতার নানা পরিবারের মেয়েদের আনাগোনায় মায়ের সঙ্গে তাঁদের বেশ সখিত্ব স্থাপন হল। মাদাম ব্লাভাটস্কি ও কর্নেল অল্‌কটের শুভাগমনও প্রায়ই হতে থাকল আমাদের বাড়িতে। তাঁরা এসে মেয়েদের দীক্ষা দিতেন।

 একদিন সবাই হলঘরে বসে আছেন। অল্‌কট সাহেব একটা কি কথা কইতে কইতে হঠাৎ উঠে সোঁ করে চলে গেলেন পাশের ঘরে। সেটা আমাদের ছেলেদের শোবার ঘর। দুই-এক মিনিট সেখানে থেকে আবার হলঘরে ফিরে এলেন। সবাই আশ্চর্য হয়ে গেল—কি ব্যাপার? অল্‌কট বল্লেন- মহাত্মা কূথোমির আবির্ভাব হয়েছিল ঐ ঘরে, তাঁকে একটা বার্তা দিতে এসেছিলেন। তাঁর ডাক পেয়ে অল্‌কট গিয়েছিলেন ঐ ঘরে। যা শোনাবার তা শুনিয়ে চলে গেছেন কূথোমি। আমরা বিস্ময়ে আনন্দে শিউরে উঠলাম। আমাদের শোবার ঘর পবিত্র হয়ে গেছে মনে হল। মহাত্মা কূথোমি এসেছিলেন ঐ ঘরে? কি সৌভাগ্য আমাদের। আমি থিয়সফিতে দীক্ষা পাবার জন্যে আকুল হলুম। দিদি দীক্ষিত হয়েছেন, কিন্তু আমার বয়স কম বলে তখনও অনধিকার। আমি ভাবতে লাগলুম কবে বড় হব, কবে দীক্ষার অধিকার হবে! অল্‌কট সাহেব একদিন কূথোমির একখানি ছবি—অয়েল পেণ্টিং নিয়ে এলেন। ছবির চোখে একটি অসাধারণত্ব আছে বটে। সে চোখ তোমার বাহির-অন্তর ভেদ করে তোমাতে প্রবেশ করছে যেন। অনেকদিন ধরে সে চোখের দৃষ্টি আমায় haunt করত।

 একবার সকালবেলা ঘুম থেকে উঠতে গিয়ে হঠাৎ আমার ঘাড়ে একটা মোচড় আসে, ঘাড় তুলতে পারি না আর, বিছানা থেকে উঠতে পারি না। একটু নড়লে-চড়লে ব্যথা হয় ভয়ানক। বাবামহাশয় অল্‌কট

৫৭