পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পেয়ে একটা কিছু ধরতে ছুঁতে পেলুম—নয়ত ও বিষয়ে মাথা আমার একেবারে ফাঁক ছিল। যা লিখলুম এবার তাতে একটা রচনা খাড়া হয়ে উঠল বটে কিন্তু লেখাটা নিজের অভিজ্ঞতাপ্রসূত হল না, নিজের হৃদয়রসে জড়ান হল না।

  আমার বোধ হয় নতুন কাপড় পরাটা দুর্গাপূজার আনুষঙ্গিক ছিল বলেই দাদামশায় ১১ই মাঘের ব্রহ্মোপাসনায় সে জিনিসটা একেবারে স্থানই দেননি। কিংবা হয়ত ১১ই মাঘের উৎসব একটি বীজের ক্রমোদ্ভব-তাঁর বাড়িতে রামমোহন রায়ের প্রবর্তিত প্রথম ব্রহ্মোপাসনার সাম্বৎসরিক অনুষ্ঠানের অনুবত্তিমাত্র, মূলত পারিবারিক কোন ব্যাপার নয়, সুতরাং এতে পারিবারিক কোন বিশেষ বিধানের স্থান নেই, এই জন্যে সেদিন পরিবারে সকলের নতুন কাপড় পরার অবশ্যকর্তব্যতা বিবেচিত হয়নি বলতে পারিনে। ফলে ঐ দিনে নতুন কাপড় পরার সংস্কার আমাদের রক্তেমজ্জায় বসে যায়নি। বিজয়ায় পরস্পর-মিলন এবং সম্পর্ক-অনুযায়িক প্রণাম বা আলিঙ্গনাদি ব্যাপারও এ পরিবারের সংস্কারভুক্ত হয়নি। সেটা পরিবারের কারো কারো মধ্যে প্রচলিত হল আশু চৌধুরী ও তার ভ্রাতাদের সঙ্গে বিবাহসূত্রে জড়িত হয়ে তাঁদের পরিবারের অনুকরণে। কিন্তু আমাদেরও একটি পারিবারিক উৎসবের দিন ছিল যেদিন পরস্পরকে আলিঙ্গন প্রণামাদি করা হত। সে নববর্ষে, ১লা বৈশাখে। নতুন কাপড় পরার কতকটা রেওয়াজও সেইদিনটিতে ছিল। এক হিসেবে এইটিই আমাদের যথার্থ পারিবারিক মিলনের দিন। সেদিন অতি ভোরে ব্রাহ্ম মূহূর্তে দেউড়িতে ঘণ্টা বেজে উঠত। ঘুমিয়ে থাকলেও জেগে উঠে, বাড়িসুদ্ধ পুরুষেরা সকলে প্রস্তুত হয়ে নবশুভ্রবস্ত্র পরিধান করে, উঠানে উপাসনা-সভায় সমবেত হতেন, আর মেয়েরা খড়খড়িতে। উপাসনাদি হয়ে গেলে বয়সের তারতম্য অনুসারে প্রণাম আলিঙ্গনাদি শেষ করে মেয়েমহলেও-সরবৎ পান করান হত বাইরে—তার বাড়ির লোকদের সেদিন সকলের একত্র ভোজন হত মধ্যাহ্নে। এক হিসেবে নববর্ষের মিলনোৎসবটি বেশি অন্তরঙ্গভাবে পারিবারিক হলেও ১১ই মাঘের উৎসবটিই উৎসব বলে আমাদের মনে প্রতিভাত হত। যাই হোক গুণে গেঁথে এই দুটি সামাজিক উৎসব ছিল আমাদের। বাকি যা ছিল— পৌষ-সংক্রান্তিতে পিঠে গড়া—সেটা একটা বিরাট অনুষ্ঠান বটে— এতবড় পরিবারের অনুকল—কিন্তু বাইরের সঙ্গে সংযোগের অভাবে ততটা উৎসবের মত নয়—ঘরোয়া আনন্দ, ননদ-ভাজ মেয়ে

৬৬