পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

প্রকাশকের নিবেদন

এক একটা জীবন যুগের সঙ্গে এমন জড়িয়ে থাকে, যেন তাকে কেন্দ্র করে জীবন-কাহিনী যুগ-কাহিনীর প্রতিচ্ছবি হয়ে দাঁড়ায়। এমনি এক জীবনের অধিকারিণী ছিলেন রবীন্দ্রনাথের ভাগিনেয়ী সরলা দেবী। সে যুগটাকে বলা যায় বাঙলার তথা ভারতের নবজাগরণের যুগ। মহর্ষি পরিবারের বিশেষ দান আছে এই নবজাগরণের যুগে। মহীরুহের মত মহর্ষি ব্রাহ্মসমাজের মধ্যস্থলে বিরাজমান-শাখাপ্রশাখায় নবসংস্কৃতির উন্মেষ। সত্যেন্দ্রনাথ ভারতের প্রথম সিভিলিয়ান হয়ে ফিরে এসেও ‘হিন্দ, মেলা’য় যোগদান করছেন ও স্ত্রীশিক্ষা স্ত্রীস্বাধীনতা প্রচারে সচেষ্ট। স্বর্ণকুমারী দেবী দর্শনচর্চা, সাহিত্যসেবা ও ‘সখি-সমিতি’ সংগঠনে নিয়োজিত। সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালীর অর্থকরী উন্নয়নে নিবিষ্ট আর রবীন্দ্রনাথ নিজস্ব প্রতিভায় ধীরে ধীরে সমগ্র গগনমণ্ডল আলোয় উদ্ভাসিত করে তুলছেন।

 আজকের বাঙালী-মানসকে বুঝতে হলে এই গৌরবময় যুগের ইতিহাস আমাদের বুঝতে হবে। সরলা দেবী ছিলেন এই যুগপ্রবাহের সঙ্গে অন্তরঙ্গভাবে জড়িত। সে সময়ের ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ, জাতি ও ধর্মের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ পরিচয় ঘটেছিল ও সর্বভারতীয় স্তরেও বহু, মনীষীর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। জাতীয়তার প্রভাবে দেশ তখন উজ্জীবিত হচ্ছে। সভা, সমিতি, মেলা, আন্দোলনের একটা জোয়ার এসেছে। সরলা দেবী এসবের আবর্তে ঘূর্ণমান শুধু নন, মেয়েদের সংগঠনে সাহায্য করে, ছেলেদের শরীরচর্চা ক্লাবগঠনে উৎসাহিত করে, নানা অনুষ্ঠান, অধিবেশনে গান গেয়ে সে ঘূর্ণির পরিধি বিস্তারে প্রচেষ্ট। বন্দে মাতরম্ সঙ্গীতকে রবীন্দ্রনাথের দেওয়া সুরে জাতীয় সঙ্গীতরূপে প্রতিষ্ঠা সরলা দেবীরই কৃতিত্বের পরিচায়ক। বাঙলার বিপ্লব-আন্দোলনের অন্যতম উদ্গাতারূপেও তিনি আখ্যাত। ঠাকুরবাড়ির নতন ঐতিহ্যের মধ্যে তিনি মানুষ, সে ঐতিহ্যে আছে যেমন মা-বিচ্ছিন্ন দাসীর দাপট, স্নেহ-বর্জিত মাস্টারমশায়ের সন্ত্রাস, তেমনি আছে ঠাকুরবাড়ির নিজস্ব স্নিগ্ধ সাংস্কৃতিক পরিবেশ যা অন্য থেকে