পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

শীর্ণ-বিশীর্ণ হতে হতে এখন ত একরকম গতাসুই হতে চলেছে। যোড়াসাঁকোর উঠানখানা যতদিন রয়েছে, ততদিন বোধহয় কর্তা দাদা- মশায়ের উইল অনুসারে নমো নমো করেও ১৯ই মাঘ চালাতে হবে। সে উঠান কিন্তু এখন রাজপথ। সেজমামার ছোট ছেলে ঋতুদাদার অংশ একজন মারোয়াড়ীর কাছে বিক্রীত। তাদের উঠান দিয়ে যাতায়াতের অধিকার আছে। ১১ই মাঘের উপাসনা ও গান যখন চলছে ঠিক সেই সময় সেই অংশের ছাদ ও খড়খড়ি বেয়ে মাড়োয়ার গিন্নীর উনুন জ্বালানর ধোঁয়া ও ফোড়নের গন্ধ উঠানে চলে আসে। আর নীচেরতলায় উঠানের গায়ে সংলগ্ন বাড়ির ভিতরমুখো সব অন্ধকেরে ঘরগুলি খোট্টা ও দেশ-বিদেশী ভাড়াটাতে ভরা। তাদের আগমন ও নিষ্ক্রমণের কোন সময় নির্ধারিত নেই। ১১ই মাঘ ব্রহ্মোপাসনা সভার ভিতর দিয়ে যার যার যখন খুশী সভা ভেদ করে গতায়াত করতে পারে ও করবে। এই দুর্যোগের দিন বোলপুরের ছেলেমেয়েরাও আর গাইতে আসে না বোলপুরেই ধুমধাম করে ১১ই মাঘ হয়, এখানে কলকাতার বিভিন্ন রবীন্দ্রসঙ্গীত-প্রতিষ্ঠানের ছেলেমেয়েদের জড় করে গানের যোগান হয়। যে সকল উৎসব অনুষ্ঠান যোড়াসাঁকোতে ছিল মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের পরিবারগত, তাঁর মৃত্যুর পর থেকে ক্রমশ হয়ে গেল তাঁর কীর্তিমান কনিষ্ঠ পুত্রের প্রতিষ্ঠানগত। যেমন ঐ বাড়ির ইমারৎখানা [ভিটাতে] মহর্ষির সম্পর্কিত যে কোন লোকের অধিকার নেই, তেমনি তাঁর প্রচলিত উৎসবাদিতেও আর তাঁর রক্তের বলেই কারো রক্তগত অধিকার নেই।

 পদ্মা যেমন কত প্রাচীন কীর্তি ও কীর্তিমান বংশের অবলোপ করে সরে গেছে আর এক প্রান্তে, মহর্ষি ও তাঁর বংশের যোড়াসাঁকোস্থ কীর্তি- কলাপ তেমনি পাশ কাটিয়ে গেছে চলে শান্তিনিকেতনে—যার ছাতিমতলার বুনিয়াদের উপর গড়ে উঠেছে অভ্রভেদী রবীন্দ্র তাজমহল। যোড়াসাঁকো এখন কুজনের কানের দ্বারা রক্ষণীয় ধংসাবশেষ।

৭২