পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 এই সময় “হিন্দুস্থান” নামে লাহোরের সাপ্তাহিক উর্দু রাজনৈতিক পত্রিকা প্রবলপ্রতাপী ছিল। ঘটনাচক্রে আমি তার স্বত্বাধিকারিণী এবং আমার স্বামী ও আমি দুজনে তার পলিসির নিয়স্তা। অনেক খয়ের-খাঁ ‘মুলাকাতের’ দিন আমার স্বামী ও আমার নাম ডেপুটি কমিশনারের কানে তুলত। সর্দার অজিৎ সিংহের সহকর্মী সুফি অম্বাপ্রসাদ একজন বিখ্যাত উর্দু লেখক। তিনি ও তাঁর কয়েকটি সাঙ্গোপাঙ্গ জেল থেকে ছাড়ান পেলেই সেইদিনই আমি তাদের ‘হিন্দুস্থান’এর সম্পাদনা কার্যে নিযুক্ত করলুম। সেটা অতি সাহসিকতার কার্য হল। কিন্তু ডেপুটি কমিশনার মণ্টেগু বাটলার সেজন্যে উতলা হয়ে আমায় রাতারাতি জেলে পাঠালেন না। তার পরদিন আমার স্বামীকে ডেকে বল্লেন, “তোমাদের শত্রু অনেক—বিশেষত তোমার স্ত্রীর। সুফি অম্বাপ্রসাদকে ‘হিন্দুস্থানে’ রেখেছ। সাবধানে কাজ নিও, শেষ পর্যন্ত আমায় যেন এরকম একজন মহিলার বিরুদ্ধে কঠোরতা অবলম্বন করতে না হয়।”

 সুফি অম্বাপ্রসাদকে ডেপুটি কমিশনারের কথাটা শোনালে তিনি বল্লেন, “লোহা আমি, গায়ে মধু মেখে বসলেও আমার গা চাটলে জিবে শক্ত লোহারই পরশ লাগবে।” ওডায়ারের রাজত্বকালে সর্দার ও সুফি ভারতবর্ষ থেকে পালিয়ে মুসলমানবেশে তুর্কীতে পৌঁচেছিলেন এই গুজব। তখন ওডায়ারের হকুমে ‘হিন্দুস্থান' বন্ধ হয়েছে। শুনতে পাই ওডায়ারের সময় মণ্টেগু বাটলার পঞ্জাবের এককোণে অনাদৃত হয়ে পড়ে ছিলেন—তাঁর সিনিয়রিটির উপযুক্ত পদ তাঁকে দেওয়া হয়নি। শাসনকর্তার পরিবর্তন হলে অনেককাল পরে তিনি নাগপুরের গবর্নরের পদ পেলেন। তাঁরই ছেলে মিস্টার আর বাটলার বিলাতে Under Secretary of State ছিলেন কিছুকাল। Franchise Commission-এ ভারতবর্ষে আসেন, আমার সঙ্গে কলকাতায় দেখা হয়।

 বম্বে অঞ্চলে মেজমামার কাছে যতবার গিয়ে থেকেছি খাস বম্বেতে যাইনি, বম্বে প্রেসিডেন্সীর মহারাষ্ট্র বিভাগের কোন না কোন শহরে বা লোকালয়ে গেছি যেমন—সোলাপুর, সেতারা, পুণা, পণ্ডরপর, মহাবলেশ্বর ইত্যাদি। সেসব জায়গার বাসিন্দা মারাঠীদের সঙ্গীতকুশলতার যথেষ্ট পরিচয় পেয়েছি। মেয়েদের নয়, পুরুষদের। তাঁদের কণ্ঠে মারাঠী বা হিন্দী উঁচুদরের গান শুনতেই সময় অতিবাহিত হয়েছে। ভাল গলায় ভাল গানের গন্ধ কোথাও পেলে হয়। বিড়াল যেমন মাছের গন্ধে বিহ্বল হয়, আমিও তেমনি গানের গন্ধে উতলা হতুম, যত

৭৬