পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পারি লিখে নিতুম, শিখে নিতুম। নিজের ভাণ্ডারে না ভরলে আনন্দ পুরো হত না। সেতারায় সোহনি বলে একজন সাবজজ ছিলেন সুগায়ক। তাঁর কাছ থেকে সংগৃহীত একটি হোলির গান চমৎকার—পাঁব লগে কর যোড়ি শ্যাম মুঝে খেল ন হোরি। আর একটি গান ছিল কালী আর গোরীর ঝগড়া। এখানে আমার নিজের গানে সময় নষ্ট হওয়ার প্রশ্রয় দিতুম না, তাতে আমার সংগ্রহের সময়ে অকুলান হয়ে যাবে।

 কিন্তু খাস বম্বে শহরে যখন একবার হপ্তা দু-তিনের জন্যে গিয়ে রইলুম একটি ভাটিয়া ক্রোরপতি বন্ধুর গৃহে—সমুদ্রতীরে ‘দরিয়া মহলে’ তখন আমার নিজের গান শুনান থেকে আর বিশ্রাম পেলুম না। গৃহপতি নারাণজী দ্বারকাদাস, তাঁর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা গোবর্ধন দাস তেজপাল—যিনি অন্য এক প্রভূত ধনী পরিবারে দত্তক গৃহীত হওয়ায় পরিবর্তিতনামা হয়েছিলেন—তাঁদের তিন-চারটি ভগ্নী ও স্ব স্ব পত্নীসহ পুরীর জগন্নাথ দর্শনে তীর্থযাত্রায় বেরিয়ে কিছুদিন কলকাতায় যাপন করেছিলেন। সেই সময় তাঁদের সুপরিচিত মিত্র এলাহাবাদের চারু মিত্র মহাশয়কে তাঁরা সংবাদ পাঠান। চারুবাবু, আমার পিতার পরম বন্ধু ছিলেন। বম্বের মেয়েদের কলিকাতা পরিদর্শনে সাথী হওয়ার ভার দিলেন তিনি আমার উপর। তাঁদের সঙ্গে সঙ্গে আলিপুরের চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, মিউজিয়ম এইসব ঘুরে ঘুরে আমার সঙ্গে তাঁদের ভাব হয়ে গেল। বোনেরা কেউ কেউ কৃষ্ণভক্ত পরিবারে বিবাহিত, কেউ কেউ শিবভক্তর ঘরে। বম্বেতে এই দুই সম্প্রদায়ে সেকালে তুমুল বিতণ্ডা চলত—রামপ্রসাদের “পাঁচেই এক, একেই পাঁচ, মন কোরো না দ্বেষাঘেষি’’র উপদেশে কেউ কান দিত না। নারাণজীর এক বড় বোন নন্দীবাঈ বৈষ্ণবের ঘরে পড়েছিলেন। আর তিনি গান গাইতেন ভারি সুন্দর, তাঁর গানের পুঁজিও অনেক ছিল, তার মধ্যে “যা যারে ভম্‌রা দূর দূর যা’’ আমার এখন মনে পড়ছে, কেননা সেটা আমিও আগেই জানতুম। এঁরা সপরিবারে আমার গানের উপর ঝুঁকে পড়লেন। যদিও বাঙলা ভাষায় গান আমার, তবু গুজরাটি ও হিন্দীর সঙ্গে কথার সাদৃশ্যে তাঁরা খুব উপভোগ করতে লাগলেন। খুব রসগ্রাহী রসিক তাঁরা। আমিও যেমন তাঁদের ফরমাস করি, তাঁরাও তেমনি আমাকে একটার পর একটা গানের ফরমাস করেন। দু-একটা গান তাঁদের কণ্ঠস্থ হয়ে গিয়েছিল—“সে আসে ধীরে, যায় লাজে ফিরে, রিনিকি রিনিকি

৭৭